রোহিঙ্গা কন্যার রাজকীয় কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠান!

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি ক্যাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা নেতার কিশোরী কন্যার কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠান। সেখানে অতিথিদের কেউ এনেছে স্বর্ণালংকার, কেউ এনেছে রুপা। অনেকে নগদ টাকা, এমনকি ছাগল নিয়েও এসেছে।

ধীরে ধীরে আয়োজকের বাড়ি স্বর্ণালংকারের স্তূপে পরিণত হয়। একইভাবে বস্তা ভর্তি হয়ে যায় টাকায়।

সম্প্রতি টেকনাফের ‘দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত’ নূর মোহাম্মদের কিশোরী কন্যার কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা এভাবে উপহার নিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে এক কেজি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ লাখ টাকাসহ আরও নানা উপহার। এ যেন রোহিঙ্গা রাজকন্যার কান ফোঁড়ানোর রাজকীয় উৎসব!

গতকাল রাতে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ অনেক মামলা রয়েছে এবং তিনি মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।

তিনি বলেন, “কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এ রকম উপহার সামগ্রী উঠার বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনেছি। এ ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদকে ধরার জন্য কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তিনি তার বিশাল অস্ত্রধারী ডাকাত বাহিনী নিয়ে টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই তাকে ধরা যাচ্ছে না।”

এ ব্যাপারে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনই রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ তার কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এতে গরু-ছাগল জবাই করে আয়োজন করা হয় বড় ভোজ অনুষ্ঠানের। আমন্ত্রিতদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা ডাকাত, সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা ইয়াবা চোরাকারবারির দল।

তিনি বলেন, “১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের জাদিমুরা এলাকায় এসে প্রথমে বাসা ভাড়া নিয়ে ছিলেন। ধীরে ধীরে সেখানেই জমি কিনে বাড়ির মালিক হন। এ পাড়ে আশ্রয় নেওয়ার পর ওপারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি সীমান্তের বিশাল ডাকাত বাহিনী গড়ে তুলেন।”

সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান জানান, এ রকম রাজকীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো ব্যাপার না। এখানে সবাই এখন ধনাঢ্য। অনেক রোহিঙ্গাই এবার ঈদুল আজহায় আড়াই লাখ টাকার বেশি মূল্যের গরু কোরবানিও দিয়েছে। এছাড়া কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য স্বনামধন্য শিল্পীদেরও মোটা অংকের টাকা দিয়ে আনা হয় বলেও জানান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, নূর মোহাম্মদের ডাকাত বাহিনী অপহরণ, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই, মানবপাচার এবং সর্বশেষ সীমান্তের একচেটিয়া ইয়াবা চোরাকারবারও হাতে নেয়। ইতিমধ্যে দুই বছর আগে বাংলাদেশে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর নূর মোহাম্মদের ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এলাকার ৫-৬টি রোহিঙ্গা শিবির, টেকনাফের বিস্তৃত পাহাড়, সীমান্তের নাফ নদী ও নদীর ওপারের রাখাইনের অভ্যন্তরে থাকা ইয়াবা কারখানা ও গবাদি পশুর বাজারসহ একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা। এসব কারণেই বাহিনীর সদস্যরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।

এ বিষয়ে ওসি প্রদীপ কুমার জানান, রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদের বাংলাদেশে ৪টি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পাকা ভবন, একটি দু’তলা, একটি টিনের ঘর এবং অপরটি বাগান বাড়ি। রোহিঙ্গারাই তাদের ‘ওস্তাদের’ কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এক কেজির মত স্বর্ণালংকার এবং সেই সঙ্গে নগদ টাকাসহ রীতিমত প্রতিযোগিতা করে উপহার সামগ্রী দিয়েছে। যে কারণেই এরকম অস্বাভাবিক পরিমাণে উপহার উঠেছে।

এছাড়া, নূর মোহাম্মদ রোহিঙ্গা নেতা হওয়ার কারণে তার বাড়িতে ভোজের দাওয়াতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, ডাকাত ও ইয়াবা চোরাকারবারিরা সবাই দলে দলে অংশ নেয়। তার বাড়ির ভোজের অনুষ্ঠান থেকে গিয়েই গত ২২ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে ‘খুন’ করে।

প্রসঙ্গত, টেকনাফ উপজেলার জাদিমুরায় গত ২২ আগস্ট রাতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বড় ভাই ওসমান গণি অভিযোগ করেন, একদল রোহিঙ্গা তার ভাইকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের একটি পাহাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

ওমর ফারুক খুনের ঘটনায় গতকাল শতাধিক বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা একটি রোহিঙ্গা শিবিরে হামলা চালিয়ে অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও এনজিও অফিসগুলোতে ভাঙচুর করে। তারা টায়ার এবং প্লাস্টিকের বক্স জ্বালিয়ে টেকনাফ পৌরসভা থেকে লেদা পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করে। রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদের বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

২৩ আগস্ট দিবাগত রাতে জাদিমুরা পাহাড়ের পাদদেশে ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই রোহিঙ্গা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। নিহতরা হলেন- টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো: শাহ ও আবদুর শুক্কুর।

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago