বিদ্যুতের নামে প্রতারণার ফাঁদে গ্রামবাসী

Lalmonirhat humanchain
৩১ আগস্ট ২০১৯, লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা নেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। ছবি: স্টার

বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন, আলোকিত হবে ঘর। হারিকেন-কুপি আর জ্বালাতে হবে না। বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক আশায় স্বপ্ন দেখছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দালালপাড়া ও জোড়াপুকুর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। তাদের অধিকাংশ কৃষক আর শ্রমজীবী।

কীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে তা তাদের জানা নেই। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রত্যেকের কাছে দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে।

মাস পেরিয়ে যায়, বছর পেরিয়ে যায় কিন্তু বাড়িতে সংযোগ হয় না বিদ্যুৎ। দীর্ঘ আড়াই বছরেও গ্রামবাসীর কাছে বিদ্যুতের আলো না পৌঁছায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। চক্রটির কাছে দেওয়া অর্থ ফেরত চাইতে গেলে গ্রামবাসীর অনেককে নানাভাবে বুঝিয়ে রাখা হয়। আবার অনেককে দেওয়া হয় হুমকি।

ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও মিলেনি কোনো সুরাহা। তাই হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী।

গত ৩১ আগস্ট লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা নেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। তাদের টাকা ফেরত চেয়ে প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তার। সেসময় তারা গ্রামে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিও জানান।

দালালপাড়া গ্রামের সহিদুল ইসলামেরে (৫৫) অভিযোগ, স্থানীয় দালালপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এক সিন্ডিকেট গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা তোলেন বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার নামে। “আড়াই বছরেও বিদ্যুৎ পাইনি। চক্রটি সরকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি,” যোগ করেন তিনি।

”আড়াই বছর আগেই স্বপ্ন দেখেছিলাম বাড়িতে আর হারিকেন-কুপি জ্বলাতে হবে না। কারণ খুব শিগগির বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছি। কিন্তু সেই আশার গুড়ে-বালি। আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে কিন্তু, কোনো কাজ করেনি চক্রটি,” জানালেন জোড়াপুকুর গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী (৫৮)।

তিনি আরো বলেন, “বিদ্যুৎ চাই না, এখনই টাকা ফেরত চাই। কিন্তু সে টাকাও আর ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।”

”এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি,” জানালেন দালালপাড়া গ্রামের দিনমজুর শাহ আলম। বললেন, “সেই হারিকেন-কুপি জ্বালিয়েই আমরা বসবাস করছি।”

একই গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, “চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেছি। কিন্তু, কোনো ফল পাইনি। আমাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। আমরা প্রতারিত হয়েছি। যারা প্রতারণা করেছে তাদের শাস্তি চাই- এটা আমাদের দাবি।”

অভিযুক্ত সেই চক্রটির একজন সদস্য মহসীন আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা গ্রামবাসীর কাছে টাকা তুলে স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের হাতে দিয়েছেন। তিনিই বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। কেনো বিদ্যুৎ সংযোগ আসলো না তা রফিকুলই জানেন।

গ্রামবাসীর টাকা কেন ফেরত দেওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নে করা হলে তিনি এর কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

এদিকে, রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এ ব্যাপারে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকেন তাহলে সেটা অন্যায় আর গ্রামবাসীর টাকা ফেরত দেয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার বিরুদ্ধই এই অভিযোগ রয়েছে জানানো হলে তিনি নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেন।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিন জানান, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন।

এস দিলীপ রায়, দ্য ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English

No scope to verify authenticity when cases are filed: IGP

Instructions have already been issued to ensure that no one is arrested in a harassing manner, he says

1h ago