আজমেরী ওসমানের কার্যালয় ও বাসায় পুলিশি অভিযান, গ্রেপ্তার ২
নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের একমাত্র ছেলে আজমেরী ওসমানের কার্যালয় ও বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেসময় আজমেরীর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ (৬ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১২টা থেকে আল্লামা ইকবাল সড়কের (কলেজ রোড হিসেবে পরিচিত) দেওয়ান মঞ্জিলের নিচতলায় আজমেরীর কার্যালয়ে প্রথমে অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযান চলে রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত। এরপর, তার দুটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রসমাজের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন (৩২) এবং মোখলেছুর রহমান (৩৫)।
উল্লেখ্য, আজমেরী ওসমান হলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান এমপি সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের ভাতিজা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানান, রাত সোয়া ১২টায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ, ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ যৌথ ভাবে অভিযান চালায়। অভিযানের শুরুতে ডিবি পুলিশের আটটি গাড়ি আল্লামা ইকবাল সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
সেসময় সাধারণ যাত্রীদের রিকশা থেকে নামিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মালবাহী ট্রাকও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান ও ফতুল্লা থানার ওসি আসলাম হোসেনর নেতৃত্বে আরো দুটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
পুলিশ প্রথমে দেওয়ান মঞ্জিলের নিচতলায় আজমেরী ওসমানের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সেখান থেকে তার সহযোগী শাহাদৎ হোসেন ও মোখলেছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভবনের পঞ্চম তলার বাসায় অভিযান চালায়। এসময় পুলিশের অন্য একটি টিম কাদের ভবন নামে পাশের একটি ভবনেও অভিযান চালায়। পরে আজমেরী ওসমানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে চলে যায় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজমেরী ওসমানের নামে চাঁদাবাজি ও একজন ব্যবসায়ীকে মারধর ও হামলার ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে সেসময় আজমেরী ওসমান ও তার অন্য সহযোগীরা কেউ না থাকায় পুলিশ চলে যায়।
সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গতকাল (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় শহরের আমলাপাড়া এলাকায় বাচ্চু ঠিকাদার নামে একজনের কাছে আজমেরী ওসমান ও তার সহযোগীরা ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আজমেরী ওসমানের লোকজন সেই ব্যবসায়ীর অফিস ভাঙচুর ও বাচ্চু ঠিকাদারকে মারধর করে। রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেন বাচ্চু ঠিকাদার। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজমেরী ওসমানের কার্যালয় ও বাসায় অভিযান চালানো হয়।
তিনি আরো বলেন, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে আজমেরী ওসমানের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও, অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ৬ মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। ৮ মার্চ সকালে চাড়ারগোপে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গঠিত সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ও ত্বকীর বাবা আজমেরী ওসমান জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছিলেন।
ত্বকী হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে আটজনই পলাতক। আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে দুই আসামি ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ইউসুফ হোসেন লিটন প্রথম ত্বকী মামলায় আদালতে জবানবন্দিতে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেন। আর ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছিলেন, ত্বকী হত্যার নেতৃত্বে ছিলেন আজমেরী ওসমান। তবে ১৬ দিন পর অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর ভ্রমর তার জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
এছাড়াও, ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট র্যাব-১১ এর সদস্যরা আল্লামা ইকবাল রোডে আজমেরী ওসমানের মালিকানাধীন ‘উইনার ফ্যাশন’ এ অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা জিন্স প্যান্ট, পিস্তলের বাট ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমাণ সামগ্রী উদ্ধার করে।
অভিযানের সময়ে অফিসের দেয়াল, সোফা, আলমারিসহ আসবাবপত্রে বুলেটের অনেক দাগ পাওয়া যায়। ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের’ দেওয়া ছয়টি টর্চার সেলের মধ্যে এ উইনার ফ্যাশনকে অন্যতম টর্চার সেল ও এখানে ত্বকীকে নির্যাতন শেষে হত্যার অভিযোগও করেছিলেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
Comments