এই হারটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ‘যন্ত্রণাদায়ক’

shakib al hasan
ছবি: বিসিবি

টেস্ট আঙিনায় ১৯ বছরের পথচলা। এই দীর্ঘ সময়েও বাংলাদেশকে ধারাবাহিক হতে দেখা যায়নি এই ফরম্যাটে, মানিয়ে নেওয়ার দৃষ্টান্তও দেখা গেছে বেশ বিরতি দিয়ে দিয়ে। আগের ১১৪ টেস্টের ফলই দিচ্ছে তার সাক্ষ্য। ৮৫টিতেই হার। এর ২৯টিতে আবার হজম করতে হয়েছে ইনিংস ব্যবধানে ধরাশায়ী হওয়ার যন্ত্রণা। অর্থাৎ বিশাল বিশাল হারের তেতো স্বাদ নেওয়ার নজির কম নেই বাংলাদেশের।

কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে, যারা কিনা টেস্ট ক্রিকেট খেলছে বছরখানেক ধরে, ঝুলিতে ছিল মাত্র দুই টেস্টের অভিজ্ঞতা, তাদের কাছে চেনা মাঠে- চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২২৪ রানের হার, তাও বৃষ্টি নামক ‘আশীর্বাদ’ সঙ্গ দেওয়ার পরও, এমন যন্ত্রণা কী আগে কখনও ভোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল?

ঘুরে তাকানো যাক পেছনে। দশম দল হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বাকি নয়টি দলের বিপক্ষে প্রথম দেখায় সবকটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। সাতটিতেই প্রতিপক্ষ জিতেছিল এক ইনিংস না খেলেই। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতে ইনিংস ও ৩১০ রানের ব্যবধানে হারটা রেকর্ড হয়ে এখনও টিকে আছে।

সেসব ম্যাচ অবশ্য ছিল টেস্ট মঞ্চে শুরুর দিককার অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর্ব। কিন্তু বড় হার পিছু ছাড়েনি বাংলাদেশের। গেল বছরও ক্যারিবিয়ানদের মাটিতে ইনিংস ও ২১৯ রানে হারতে হয়েছে তাদের। সাদা পোশাকে ১০ উইকেটের হার দেখতে হয়েছে চারবার। শুধু রানের হিসাব টানলে, চারশোর বেশি ব্যবধানেও কুপোকাত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে এই চট্টগ্রামেই শ্রীলঙ্কার কাছে ৪৬৫ রানের হার হজম করতে হয়েছিল।

পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করলে, ওইসব নজিরের পাশে আফগানিস্তানের কাছে হারের ব্যবধানটা তেমন বড় কিছু নয়। তবে কেবল সংখ্যার মাপকাঠিই তো সব নয়। আর ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা বটে, বড় দল হয়ে ছোট দলের কাছে হেরে যাওয়াটা এখানে খুবই সম্ভব, কিন্তু বাংলাদেশের খেলার ধরনটাই যে চোখে আঙুল দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে এই ফরম্যাটে তাদের বিবর্ণ-হতশ্রী দশা।

হার প্রায় নিশ্চিত- এমন পরিস্থিতিতে সাকিব আল হাসানদের আশার আলো দেখিয়ে গেছে বৃষ্টি। ম্যাচ বাঁচাতে দলের ব্যাটসম্যানরা যতটা না নিবেদন দেখিয়েছেন, তার চেয়ে প্রকৃতিই বেশি লড়াই করেছে তাদের হয়ে। শেষরক্ষা হয়নি তাতেও। ফল- আফগানদের কাছেও হার। অর্থাৎ যে দশ দলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, প্রথম দেখায় তাদের সবার কাছেই হারের কীর্তিটা (!) অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) পঞ্চম দিনের প্রায় পুরোটা (মাঝে খেলা হয়েছে ১৩ বল) ভেসে যাওয়ার পর শেষ সেশনে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে বাংলাদেশকে টিকতে হতো কেবল ১৮.৩ ওভার। কিন্তু তালগোল পাকিয়ে ফেলা অধিনায়ক সাকিব বা সৌম্য সরকার বা মেহেদী হাসান মিরাজরা সেটাও করে দেখাতে পারেননি। ফলে ৩.২ ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৭৩ রানে। লেখা হয়েছে আফগান রূপকথা।

সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার ছিল, পাঁচদিনে একবারের জন্যও দুই দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বাংলাদেশকে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা যায়নি। পুরোটা সময় জুড়ে চালকের আসনে ছিল নবিশ আফগানিস্তান। তবে মাঠে যে ক্রিকেট দেখা গেছে, তাতে গোটা ব্যাপারটাই উল্টো মনে হয়েছে- ‘নবিশ’ বাংলাদেশ যেন খেলতে নেমেছিল নিজেদের তৃতীয় টেস্ট, আর ‘অভিজ্ঞ’ আফগানিস্তান ১১৫তম!

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

7h ago