মুজিব-রশিদের স্পিনেই কাবু বাংলাদেশ
ফের একই গল্প। আরও একবার আফগানিস্তানের স্পিনারদের সামলাতে পারল না বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আর সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ে শুরুতে যে ইঙ্গিত মিলেছিল, আরও একবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় তা একেবারেই উধাও। প্রথমে মোহাম্মদ নবির ঝড়ে আফগানরা পায় লড়াইয়ের পূঁজি, এরপর মুজিব-উর-রহমান আর রশিদ খানের স্পিনেই কাঁপাকাঁপি করে কাবু হয়ে যায় বাংলাদেশ।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের কাছে হারের স্রোত থামাতে পারেনি বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করা আফগানদের ১৬৪ রানের জবাবে ১৩৯ রানেই গুটিয়ে যায় সাকিব আল হাসানের দল। টানা দুই জয়ে ফাইনালে উঠার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল আফগানিস্তান।
দলকে জেতাতে ব্যাটিং ৫৪ বলে ৮৪ রান করে আফগানদের হিরো নবি, বল হাতে ১৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মূল নায়ক মুজিব।
লক্ষ্যটা খুব বড় নয়। ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে ১৬৫ রান তো নাগালের মধ্যেই। এমন রান তাড়ায় মুজিবের জুজুই শুরুতে কাবু করে দেয় বাংলাদেশকে। তার অফ স্পিন সামলাতে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করতে নামেন মুশফিকুর রহিম। বাঁহাতিদের বিপক্ষে অফ স্পিন আরও ধারালো, সে চিন্তা থেকে ডানহাতি লিটন দাসের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল তাকে। কিন্তু সে চিন্তা শুরুতেই বুমেরাং। বাজে এক শটে কোন রান করার আগেই বিদায় নেন লিটন।
মুশফিক পেসার ফরিদ মালিককে দারুণ কাভার ড্রাইভে শুরু করেছিলেন। কিন্তু কি মনে করে পরের বলেই খেলতে গেলেন স্কুপ শট। শরীর ঘোরানোর আগেই নিখুঁত নিশানার বল ছত্রখান করে দেয় তার স্টাম্প। ১১ রানেই নেই দুই ওপেনার।
অধিনায়ক সাকিব তিনে নেমে ছিলেন ইতিবাচক। কিন্তু থিতু হওয়ার আগেই হয়ে যায় গড়বড়। মুজিব জুজুতে কাবু হয়ে তারও টপ এজ হয়ে ক্যাচ যায় মিড অনে রশি খানের হাতে। ওপেনিং থেকে পাঁচে ছিটকে সৌম্য সরকারের দিন ফেরাতে পারেননি অধিনায়ক। প্রথম বলেই মুজিবের স্পিনে কাবু হয়ে এলবিডব্লিও হয়ে ফেরত যান তিনিও।
আরও একবার টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ৩২ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে দল তখন কাঁপছে। পঞ্চম উইকেটে সাব্বির রহমানকে পেয়ে চারে নামা মাহমুদউল্লাহ পরিস্থিতি সামলে দলকে টানছিলেন। চাপ সামলাতে দুজনেই শুরুতে খেলেন ধীরলয়ে। দাপট দেখিয়ে খেলতে না পারলেও জুটি জমছিল দুজনের। তবে পালটা আক্রমণ করতে না পারাতেই বেড়ে যায় আস্কিং রানরেটের চাপ। তা পুষিয়ে দিতে আগ্রাসী হতে শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মাঝে মাঝে পাচ্ছিলেন বাউন্ডারি। ওভারপ্রতি দশের উপর রান নেওয়ার চাহিদা দেখে ভুল হয়ে যায় তার। মিডিয়াম পেসার গুলবদিন নাইবকে উড়াতে গিয়ে থামান ৩৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। এতে ভাঙে ৫০ বলে ৫৮ রানের জুটিও।
থিতু হওয়া সাব্বির খানিক পরই পথ ধরেন সঙ্গীর। মুজিবকে পেটাতে গিয়ে ২৭ বল খরচ করে ২৪ রানে ক্যাচ দিয়েছেন মিড উইকেটে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দারুণ জুটিতে দলকে জেতানো আফিফ হোসেন ব্যাটিং পান সাতে, আটে পান আগের ম্যাচে সাফল্যের সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেনকে। কিন্তু ততক্ষণে চ্যালেঞ্জটা হয়ে গেছে আরও অনেক কঠিন। এবার আর হয়নি তাদের। প্রায় অসম্ভব চেষ্টায় দুজনেই থামেন অল্প রানে। বাদ বাকি সময় ম্যাচে থাকেনি কোন উত্তাপ।
এর আগে টস হেরে বোলিং পেতে ইনিংসের একদম প্রথম বলেই মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ভেতরে ঢোকানো দারুণ বলে স্টাম্প উড়িয়ে দেন গুরবাজ রাহমানুল্লাহর। পরের ওভারে সাকিবকে মারতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ উঠিয়ে ফেরেন বিপদজনক হযরুল্লাহ জাজাই।
তেতে থাকা সাইফুদ্দিন নিজের দ্বিতীয় ওভারে আগ্রাসী নাজীব তারাকাইকেও ফিরিয়ে দেন। আগের দিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তোলপাড় করা নাজিবুল্লাহ জাদরানকেও বাড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। সাকিবের বলে ছক্কা মারার নেশায় সৌম্য সরকারের হাতে জমা পড়েন তিনি।
সাইফুদ্দিনের পরের স্পেলে ফিরে গুড লেন্থে বল ফেলে স্টাম্প উড়ান গুলবদিন নাঈবেরও। পরে একবার জীবন পেয়ে ৪০ করা আসগর আফগানের উইকেটও নেন তিনি।
তবে থামানো যায়নি মোহাম্মদ নবিকে। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু। ছক্কার ঝড়ে নবিই দলকে নিয়ে যান চ্যালেঞ্জিং স্কোরে।
শেষ ৫ ওভারে ঝড় তুলে ৫৫ আনেন নবি। মোস্তাফিজুর রহমানের করা শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান না এলে স্কোর হতে পারত আরও বড়।
৫৪ বলের ইনিংসে ৩ বাউন্ডারির সঙ্গে সাতটি বিশাল ছক্কা মেরে ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে যান নবি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৪/৬ (গুরবাজ ০, জাজাই ১, তারাকাই ১১ , আসগর ৪০, নাজিবুল্লাহ ৫, নবি ৮৪* , গুলবদিন ০, করিম ৫* ; সাইফুদ্দিন ৪/৩৩, সাকিব ২/১৮ , মোস্তাফিজ ০/২৫, তাইজুল ০/৩২, সৌম্য ০/৩১, মোসাদ্দেক ০/১২, মাহমুদুল্লাহ ০/৩)
বাংলাদেশ: ১৯. ৫ ওভারে ১৩৯ (লিটন ০ , মুশফিক ৫ , সাকিব ১৫ , মাহমুদউল্লাহ ৪৪ , সৌম্য ০, সাব্বির ২৪ , আফিফ ১৫ , মোসাদ্দেক ১২, সাইফুদ্দিন ২, তাইজুল ০*, মোস্তাফিজুর ১৫ ; মুজিব ৪/১৫, ফরিদ ১/৩৩, করিম ০/২৭, নবি ০/১১, রশিদ ২/২৩, গুলবদিন ২/২৭ )
ফল: আফগানিস্তান ২৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ নবি
Comments