তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে, পানিবন্দী অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ

কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের প্রায় অর্ধ লাখেরও বেশি মানুষ। অনেকে গবাদি পশু-পাখি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
Lalmonirhat flash flood
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, লালমনিরহাটের বাগডোরা গ্রামের এক নারী পানিতে দাঁড়িয়ে উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে রান্নার চেষ্টা করছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের প্রায় অর্ধ লাখেরও বেশি মানুষ। অনেকে গবাদি পশু-পাখি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।

গতকাল রাত থেকে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। পানির নীচে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা ও আমন ধানের চারা।

আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপারের গ্রাম গোর্বধানের কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, “আমার সাত বিঘা জমির রোপা-আমন ধানের চারা পানির নীচে তলিয়ে গেছে। সময়মতো বানের পানি নেমে না গেলে রোপা-আমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি বলেন, “অসময়ে আমরা আরও একটি বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। এখন মাঠে রয়েছে ফসল। আর এ ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আমরা দুর্বিসহ জীবনে পড়ে যাবো।”

একই গ্রামের ফজলার রহমান (৫৮) বলেন, “তিস্তা নদীর পানি আকস্মিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। রান্না-বান্না করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনে এনে পরিবারের সবাইকে খাওয়াচ্ছি।”

Lalmonirhat-flash-flood-2.jpg
গতকাল রাত থেকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

“বানের পানিতে সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হবে”, বলেন তিনি।

আকস্মিক তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিস্তাপারের মানুষ। সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন তারা। তিস্তার পানি দ্রুত হ্রাস না পেলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে তারা জানিয়েছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর গড্ডিমারীর আসমা বেগম (৪৫) বলেন, “আকস্মিক তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বাড়ি-ঘর বানের পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদি পশু-পাখি আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আমরা কোনোরকমে নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছি।”

“গেল দুই মাসে তিনটি বন্যা পরিস্থিতির ধকল এখনও কাটিয়ে ওঠতে পারিনি,” বলেন তিনি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধুভূষণ রায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চর এলাকার রোপা-আমন ও সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে রোপা-আমনের তেমন ক্ষতি হবে না, তবে সবজির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

Lalmonirhat-flash-flood-1.jpg
বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়া নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছে বাগডোরা গ্রামের এক শিশু। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফজলে করিম জানান, মঙ্গলবার রাতে তিস্তার পানি অনেক বেড়েছিলো। তবে সকাল আটটার দিকে পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও, সাড়ে নয়টা থেকে আবারও পানি বাড়ছে।

এখন পযর্ন্ত তিস্তা নদীর পাড় ভাঙনের হুমকিতে নেই, তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

9h ago