হাকালুকিতে ‘মাছের মড়ক ঠেকাতে বরাদ্দ নেই’

হাকালুকি হাওর যেমন ধানের অপার সম্ভাবনাময় এলাকা, তেমনি মাছেরও অভয়াশ্রম। এখান থেকে আশপাশের বিভিন্ন জেলার মাছের চাহিদা পূরণ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে বেশ কিছুদিন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ মরে ভেসে উঠলেও স্থানীয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।

হাকালুকি হাওর যেমন ধানের অপার সম্ভাবনাময় এলাকা, তেমনি মাছেরও অভয়াশ্রম। এখান থেকে আশপাশের বিভিন্ন জেলার মাছের চাহিদা পূরণ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে বেশ কিছুদিন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ মরে ভেসে উঠলেও স্থানীয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।

মড়ক ঠেকাতে যদি দ্রুত কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে আবারো হাওরে দেখা দিতে পারে ২০১৭ সালের মতো মাছ ও জলজ প্রাণীর মড়ক।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশি তাপমাত্রায় আগাছা পচে হাওরের পানিতে অ্যামেনিয়া গ্যাস বেড়ে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। তবে ১৮ হাজার হেক্টরবেষ্টিত এই হাওরে যে সামান্য পরিমাণে জিওলাইট ও টিমসেন ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।

এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরের কাঁচা ও আধা পাকা বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিলো। তখন ধান পচে পানি দূষিত হয়ে পড়লে সাধারণ কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সেসময় হাওরের মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়।

Hakaluki haor
হাকালুকি হাওরে ভেসে উঠা মরা মাছ। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

স্থানীয় ও মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওরটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৮ হাজার হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত। সম্প্রতি হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠার খবরের সত্যতা পায় মৎস্য বিভাগ।

এ অবস্থায় হাওরের পানির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে গৌড়কুড়ি, চকিয়া, ধলিয়া, নাগুয়া, কানলি এবং হাওয়াবন্যা বিলসহ এর আশপাশের এলাকায় ৫৮০ কেজি জিওলাইট ও ২০ কেজি টিমসেন ছিটিয়ে দেওয়া হয়।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরের জুড়ী অংশের চাতলা ও নাগুয়া এবং কুলাউড়ার চকিয়া বিলের আশপাশে বেশকিছু দেশি পুঁটি, রুই, কাতলা, ঘনিয়া, গুতুম, কই, বাইন ও ট্যাংরা মাছ মরে ভেসে উঠেছে।

চাতলা বিলের কাছে হাওরের পানিতে বেড়জাল টেনে মাছ ধরছিলেন ২০-৩০ জন মৎস্যজীবী। তারা জানালেন, গত এক সপ্তাহ থেকে হাওরে মাছ মরছে। তবে, কী কারণে মাছ মরছে তা তাদের জানা নেই।

কুলাউড়ার ভূকশিমইল এলাকার কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, “আমি সবসময় চকিয়া বিলে মাছ ধরি। কিন্তু, গত কয়েকদিন আগে সেখানে গিয়ে দেখি মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। এতে আমি ও আমার পরিবার হুমকির মুখে পড়েছি।”

“এবছর ধান বিক্রি করে পারিশ্রমিকের টাকাই তুলতে পারিনি। মনে করেছিলাম মাছ ধরে পাঁচ সদস্যের পরিবার খরচ চালাবো। ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিবো। কিন্তু, তা আর হলো না,” যোগ করেন আব্দুল কাদির।

Hakaluki haor
মাছ মরে ভেসে উঠছে হাকালুকি হাওরে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, “এখন মা মাছের প্রজনন মৌসুম। এখন তাদের জন্যে প্রয়োজন নিরাপদ পানি। কিন্তু, অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে মারাত্মকভাবে মা মাছের স্বাস্থ্য হানি হতে পারে। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যদি দ্রুত কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে হাকালুকি হাওরে ২০১৭ সালের মতো মড়ক দেখা দিতে পারে।” এজন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, “হাওরে মাছের মড়ক ঠেকাতে সরকারি কোনো বরাদ্দ পাইনি। কিন্তু, নিজ উদ্যোগে হাওরের পানির গুণাগুণ রক্ষা করতে শুধুমাত্র হাওরের কুলাউড়া অংশে সামান্য পরিমাণে জীবাণুনাশক জিওলাইট এবং টিমসেন ওষুধ ছিটানো হয়েছে।”

অন্য চারটি উপজেলায় মাছের মড়ক ঠেকাতে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago