‘পরীক্ষা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নেই’

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক সাদেকা হালিম এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এসেছিল যে, ডাকসু নির্বাচনের আগে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ‘চিরকুট’ দিয়ে ৩৪ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বাণিজ্য অনুষদের সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি করিয়েছেন। উপাচার্যের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, চিরকুট দিয়ে তিনি ভর্তি করাননি। এভাবে ভর্তি করানোর সুযোগও নেই।

এরপর বাণিজ্য অনুষদের ডীন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, পরীক্ষা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়ম আছে, এবং সেই নিয়ম অনুযায়ী ৩৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।

এমন নিয়ম কোথায় লেখা আছে, স্বপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ আছে কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, লিখিত নিয়ম আছে। পরে তিনি সাংবাদিকদের তা সরবারাহ করবেন।

অন্য প্রায় সকল শিক্ষক-ডীন-সাবেক উপাচার্যরা বলছেন, পরীক্ষা ছাড়া ভর্তির সুযোগ নেই। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম তার অবস্থান বা বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ হাজির করেননি। গণমাধ্যমের সঙ্গে এখন আর কথাও বলছেন না।

সেই ৩৪ জনের মধ্যে সাত জন ডাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। ভর্তি প্রক্রিয়া বৈধ না হলে ছাত্রত্ব থাকার কথা নয়, ডাকসুতেও থাকার সুযোগ থাকে না। বিষয়টি নিয়ে ঢাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ আক্রমণ করেছে। আন্দোলন বন্ধ হয়নি। পরিস্থিতি ক্রমেই যেন জটিল হয়ে উঠছে।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের পক্ষ কথা বলেছি ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম এবং আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের সঙ্গে।

চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সঙ্গে।

লিখিত পরীক্ষা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আছে কী না?- এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষা ছাড়া ভর্তির কোনো সুযোগ আছে- এটা আমার জানা নেই। আমি যতোদিন (উপাচার্যের) দায়িত্বে ছিলাম ততোদিনে এমন কোনো নিয়ম ছিলো না। পরবর্তীতে কী (নিয়ম) হয়েছে, তা আমার জানা নেই।”

ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক-আন্দোলন  চলছে- “হ্যাঁ,  চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো চালু করা হয়েছে পেশাজীবীদের জন্যে। এই কোর্সগুলো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কর্মসূচিগুলোর বাইরে। যেটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে- ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্স- সেটি আমি উপাচার্য থাকাকালীন চালু হয়েছে। ফলে আমি বিষয়টি জানি। যারা ট্যাক্স-রিলেডেট চাকরি করছেন বা তাদের এডুকেশন ক্যারিয়ারে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাননি- তাদের ট্রেনিং হিসেবে এই কোর্সটি চালু করেছিলাম। এ কোর্সগুলো কোনো বাণিজ্যিক কারণে চালু করা হয়নি।”

“যারা ভর্তি হয়েছে তারা যদি ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হয়ে থাকে তাহলে তা একটি অপরাধ। যদি কোনো আসন শূন্য থাকে তাহলে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। এটি তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি সবার জন্যে উন্মুক্ত থাকতে হবে। এখানে কয়েকজন আসলো, আর ভর্তি করে নিলাম- এর কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো প্রক্রিয়ায় পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট থাকতে হবে। সেই অ্যানাউন্সমেন্টে আগে থেকেই বলতে হবে, ভর্তির জন্যে কী কী শর্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট করেছে তাদেরকে পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি করা হবে- সেটাও অ্যানাউন্সমেন্টে থাকতে হবে।… এটাই হচ্ছে নিয়ম, যা আমার দায়িত্বকালে ছিলো। পরবর্তীতে সেই নিয়ম কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।”

পরীক্ষা ছাড়া কাউকে ভর্তি করানো হলে তখন কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?- “যদি এমন ব্যত্যয় ঘটে থাকে তাহলে কী করণীয় তাও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে রয়েছে।… এটি আগেও দেখা গেছে যে নানাভাবে যারা অনিয়ম করে ভর্তি হয়েছে তাদের ভর্তি বাতিল হয়েছে।”

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “অনুষদ-ভিত্তিক যদি (ভিন্ন) কোনো নিয়ম থাকে তাহলে তা আমি জানি না।”

লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া সান্ধ্যকালীন কোর্সে ৩৪ জনের ভর্তির বিষয়টি- “সেটি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যাপার। তাদের ব্যাপার তারা জানে।… আমার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ১৬টি বিভাগের মধ্যে যে কয়েকটিতে সান্ধ্যকালীন বা প্রফেশনাল কোর্স রয়েছে যেখানে ভর্তির জন্যে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা দুটিই দিতে হয়।”

এখন পর্যন্ত তো অনুষদগুলো একই নিয়মেই চলছে?- “সেটিই চলার কথা।’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “না, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে হয়। আমাদের ভর্তি পরীক্ষাগুলো খুব সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। এর বাইরে সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদ আয়োজন করে থাকে। আমরা যতোটুকু জানি- সেগুলোতেও একটি লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তি হতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু নিয়মের ভেতর দিয়ে হয় এবং তা স্ট্রাকচার্ড। এখানে (পরীক্ষা ছাড়া ভর্তির) কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।”

নিয়ম ভাঙা নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে সে বিষয়ে আপনার মন্তব্য- “এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত না। কারণ, একদিক থেকে এক কথা বলা হচ্ছে- আবার উপাচার্য তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন একরকম দাবি করেছেন।”

“তবে পরীক্ষা ছাড়া ভর্তির বিষয় সংক্রান্ত মূল তথ্যটি যদি সঠিক হয়… আমি মনে করি- লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়া ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। এমনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে পারে না।”

যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে?- “যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে আমি মনে করি যে এটি একটি ব্যত্যয়। সুস্পষ্ট একটা ব্যত্যয় হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজের সঙ্গে এটি যায় না। যদি ওরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে তা তদন্ত করে দেখা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বা এর বাইরেও যদি অন্যকোনো ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী তদন্ত কমিটির উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

5h ago