সম্রাট আসলে কোথায়?
ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট গত কয়েকদিন ধরে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন, যা সর্বত্র আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অস্বীকার করছিলো না যে তিনি কার্যালয়ে নেই। এও জানা যাচ্ছিলো যে, সম্রাট দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। আবার এখন ‘গুজব’ আকারে জানা যাচ্ছে যে, গত রাতে সম্রাট ‘ছদ্মবেশে’ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গেছেন। সম্রাট কার্যালয়েই আছেন, না বেরিয়ে গেছেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি কার্যালয় কেনো বসে থাকবেন, প্রশ্ন-রহস্যের উত্তর মিলছে না।
তাকে যদি গ্রেপ্তার করতে চাওয়া হতোই, কার্যালয়ে থাকা অবস্থায় ইচ্ছে করলেই তা সম্ভব ছিলো। তার ঠিকাদারি ব্যবসার কার্যালয় বিশেষ কোনো স্থান নয় যে, ভেতরে ঢুকতে বা গ্রেপ্তারে কারও অনুমতির প্রয়োজন ছিলো। তবুও সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছিলো এভাবে যে ‘গ্রেপ্তার এড়াতে’ সম্রাট কার্যালয় থেকে বের হচ্ছেন না।
জানা যাচ্ছিলো, রাজধানীর ক্লাবগুলোতে ‘ক্যাসিনো’ ব্যবসার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের কারণে সম্রাট তার নিরাপত্তারক্ষী ও সমর্থকদের দিয়ে অফিস ভবনটি ঘিরে রেখেছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে যুবলীগের পদধারী এক নেতা জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলের একটি ফুটবল ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ ব্যবসা চালানোর অভিযোগে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সম্রাট তার কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সম্রাটের কার্যালয়ে যান এই প্রতিবেদক এবং সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন। তবে প্রতিবেদককে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় সম্রাট আদৌ সেখানে রয়েছেন কী না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।
সম্রাটের সমর্থকরা আটতলা ভবনটির মূল ফটক ঘিরে রেখেছেন এবং কেউ ঢুকতে গেলেই বাধা দিচ্ছেন। কার্যালয়ের সামনে ৫০ জনেরও বেশি সমর্থককে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
দলীয় পদবী প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে যুবলীগ নেতা হিমেল বলেন, “সরকারের রোষানল থেকে বাঁচতে ভাই এই মুহূর্তে দেশের বাইরে যেতে চাইছেন। কিছুদিনের মধ্যে নতুন কোনো ইস্যু এসে গেলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
সম্রাটের খুব কাছের লোক দাবি করে এক ব্যক্তি জানান, সম্রাট চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইছেন, পালাতে নয়।
তিনি আরো জানান, গতবছর সিঙ্গাপুরে হার্টের চিকিৎসা করিয়ে এসেছেন সম্রাট। চিকিৎসার প্রয়োজনেই আবার তার সেখানে যাওয়া দরকার।
সম্রাট ভবনটির কোন তলায় রয়েছেন, তার ঘুমের ব্যবস্থা কী এবং কীভাবে খাবার দেওয়া হচ্ছে- এই প্রতিবেদকে সবকিছু জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, “তিনি এখানে বেশ ভালোই আছেন।”
যুবলীগের অপর এক সূত্রে জানা গেছে, সম্রাটের সঙ্গে অন্তত শতাধিক সমর্থক এবং নিরাপত্তারক্ষী ভবনটির ভেতরে অবস্থান করছেন।
তাকে দেশত্যাগের অনুমতি দিতে সম্রাট বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের রাজি করানোর চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে সম্রাটের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়।
দলের অনেক নেতা-কর্মীকে ওই এলাকায় আনাগোনা করতে দেখা যায়।
সম্রাটের কার্যালয় সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসে এক তরুণকে বলতে শোনা যায়, “কিছুদিনের মধ্যেই এই দুর্দিনের অবসান ঘটবে। সম্রাট ভাই তখন আবার খেলা শুরু করবেন। তখন আর চার নয়, তিনি ছক্কা মারবেন।”
তাকে উদ্দেশ্য করে আরেক তরুণ বলছিলেন, “চিন্তা করো না, এই ঝড় (ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান) হঠাৎ করেই থেমে যাবে। ভাই যদি নিরাপদে থাকতে পারেন, তাহলে আর দুশ্চিন্তার কিছু নেই।”
এর মধ্যেই কয়েকজন এসে এই প্রতিবেদককে স্থান ত্যাগ করতে বলেন।
‘ক্যাসিনো’ ব্যবসার সঙ্গে সম্রাটের জড়িত থাকার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে, পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম) সোহেল রানা জানান, ‘ক্যাসিনো’ ব্যবসা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্রাটের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে গত ২১ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।
Comments