বশেমুরবিপ্রবি: কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখালেও কাজ হয়নি প্রায় কিছুই

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায় যে, ক্যাম্পাস চত্বরে পাকা শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ ৬৮ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে।
wooden_shaheed_minar-1.jpg
বশেমুরবিপ্রবিতে অস্থায়ী কাঠের কাঠামোয় নির্মিত শহীদ মিনার অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এমনকি এর ওপরের অংশের ফ্রেম খুলে পড়ছে। ছবি: রাফিউল ইসলাম

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায় যে, ক্যাম্পাস চত্বরে পাকা শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ ৬৮ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে।

তবে সেখানে আসলে যা আছে তাহলো- একটি অস্থায়ী কাঠের কাঠামো, যেটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এমনকি এর ওপরের অংশের ফ্রেম খুলে পড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মোট ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বাজেট থেকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়ে গেছে, বাস্তবে যে কাজ আসলে শুরুই হয়নি।

এখানেই শেষ নয়। কর্তৃপক্ষ নথিতে আরও উল্লেখ করেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল কমপ্লেক্স, একটি মিলনায়তন এবং দুটি ফটক নির্মাণে প্রায় ৮ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল কমপ্লেক্সের ১৬ শতাংশ, মিলনায়তনের ১৫ শতাংশ এবং দুটি ফটকের ৪৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ থাকলেও, সরেজমিনে গিয়ে এসব স্থাপনার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রকল্পে দুর্নীতি এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি এখন সর্বত্র আলোচনায়।

এ বিষয়ে উপাচার্য জানান যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়নি। এখনও কোনো প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা হয়নি দাবি করে, এসব ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে প্রকল্প পরিচালক অথবা উপ-প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

উপ-প্রকল্প পরিচালক তুহিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্রে উল্লেখ করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “আগামী বছরগুলোতে বাজেট বরাদ্দ পেতে আমাদের অগ্রিম ব্যয় দেখাতে হয়। আসলে এখনও কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি।”

নথিতে উল্লেখিত ব্যয়কৃত টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তুহিন জানান যে, তারা এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত পাঠিয়েছেন। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই একই উপায়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-রেজিস্ট্রার (যিনি গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাবির নানা উন্নয়ন প্রকল্পে জড়িত আছেন) তুহিনের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “তারা কীভাবে এটি করেছে তা আমি জানি না। ঢাবিতে আমরা কখনও তা করিনি। কোনো কাজ না করে ব্যয় দেখানো নিয়মের লঙ্ঘন।”

নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি আরও বলেন, “আমাদের নথিতে আমরা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকৃত অগ্রগতি প্রদর্শন করেছি। বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে আমরা সবসময় কাজে এগিয়ে ছিলাম।”

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উন্নয়ন এবং পরিকল্পনা পরিচালক ফেরদৌস জামান জানান, কোনো কাজ না করেই ব্যয় দেখানোর সুযোগ নেই। এটি উন্নয়ন পরিকল্পনা বিধির পরিপন্থী।

তিনি বলেন, “এটি দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে দেয়।”

“উন্নয়ন প্রকল্পের সকল অগ্রগতি জানতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিবো। তাহলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে”, বলেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাও ইউজিসি পরিচালক ও ঢাবি উপ-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

২০১৪ সালে বশেমুরবিপ্রবিতে ১০৫ কোটি টাকার ২৩টি প্রকল্প গৃহীত হয় এবং সবগুলো প্রকল্পের কাজ গতবছর শেষ হওয়া কথা ছিলো। পরবর্তীতে প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে মোট ব্যয় ২৫৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় উন্নীত করে ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।

উপ-প্রকল্প পরিচালক তুহিন মাহমুদ গত রবিবার বলেন, “বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল কমপ্লেক্স ও শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য আমরা কয়েকদিনের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতাম। কিন্তু তার আগেই আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।”

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর আন্দোলনের চাপে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ছয় মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল কমপ্লেক্স ও শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায়।

আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আট বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলো, অথচ সেখানে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল কমপ্লেক্স ও শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাব দেখিয়ে ফেলেছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বাস্তবায়িত ও চলমান প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে, সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন:

পানি-বিদ্যুৎ নেই, বশেমুরবিপ্রবির আন্দোলন তবুও দমছে না

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর ‘উপাচার্য সমর্থক’দের হামলা

বশেমুরবিপ্রবিতে পূজার আগাম ছুটি, হল না ছাড়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago