‘সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের ছেলেরা আমার ছেলে, ওদের ওপর যেনো অত্যাচার না হয়’

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া বেগম বলেছেন, আমি এক ছেলেকে হারিয়েছি, আর কোনো ছেলেকে হারাতে চাই না।
abrars-mother-1.jpg
বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া বেগম। ছবি সৌজন্য: প্রথম আলো

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া বেগম বলেছেন, আমি এক ছেলেকে হারিয়েছি, আর কোনো ছেলেকে হারাতে চাই না।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা ছেলের জন্য সব ছেলেরা রাজপথে নেমেছে। আমি চাই না আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক খালি হয়। আমার এক ছেলে নেই, এখন সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের ছেলেরা আমার ছেলে। ওদের ওপর যেনো কোনো অত্যাচার না হয়।”

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর রাজপথে নেমে টানা পঞ্চম দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সহপাঠী হত্যার দ্রুত বিচারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে অনড় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আবরার হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে।

এদিকে আবরারের নিজ জেলা কুষ্টিয়া এখন যেনো এক আতঙ্কের নগরী। বিশেষ করে আবারারের মৃত্যুর পর তার পরিবার, রায়ডাঙ্গাবাসী ও তার নিজ স্কুল কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভীতিকর এক অবস্থার মাঝে দিনযাপন করছেন।

“আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি,” জানিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আবরারের মা প্রশ্ন করেন, “যে ভিসি আমার ছেলেকে নিরাপত্তা দিতে পারলো না, সেই ভিসি কীভাবে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের নিরাপত্তা দেবে?”

গতকাল নিজ বাড়িতে তিনি আরও বলেন, “এক ছেলেকে হারিয়েছি আরেক ছেলেকে হারাতে চাই না। আমি ওর নিরাপত্তা চাই। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তাদের আমি শাস্তি চাই, তাদের বুয়েট থেকে বহিষ্কার চাই। আমার বড় ছেলেকে সবচেয়ে বড় ডিগ্রি নিতে ওখানে পাঠিয়েছিলাম। সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হলো না। আমার সেই স্বপ্ন যেনো ছোট ছেলেকে দিয়ে পূরণ করতে পারি, দেশবাসী সবার কাছে আমি এই দোয়া চাই।”

abrar-murder-1.jpg
বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদের কক্ষে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা বরকত উল্লাহ। ছবি: স্টার/আমরান হোসেন

বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে (২১) রবিবার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বুয়েটের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুক এলাহি তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে, আবরারকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী।

এদিকে, প্রিয় সন্তানকে যারা বাঁচতে দেয়নি তাদেরও কঠিন পরিণতি দেখে কবরে যেতে চান আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ। দ্রুত চার্জশিটের পাশাপাশি দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি দ্রুত বিচার আইনের আওতায় নিয়ে আসারও দাবি জানান তিনি।

গতকাল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মামলার আসামি বাদেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কী না, তদন্ত করে বের করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয় এবং শিক্ষাঙ্গনে এমন মেধাবী ছাত্র যেনো অকালে ঝরে না পড়ে।”

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago