ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ভাবমূর্তি ফেরাতে চান সৌরভ
গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করেন সৌরভ গাঙ্গুলি। এর পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত চলা বোর্ড সভায় নাটকীয়ভাবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে একক মনোনয়নের জন্য চূড়ান্ত হয় সৌরভের নাম। তখন থেকেই গুঞ্জন, সামনে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন থাকায় তৃণমূলের বিপক্ষে বিজেপির হয়ে প্রচারণার শর্তেই কি হলো এমন মোড় ঘোরানো কিছু? বিশাল দায়িত্ব নেওয়ার আগে সৌরভ অবশ্যে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন তা। বরং নানা কারণে ভাবমূর্তি সংকটে পড়া বোর্ডের সুনাম ফেরাতেই নাকি তিনি নিয়েছেন এই দায়িত্ব।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি পদে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন সোমবার। কিন্তু এই পদে আর কেউ মনোনয়ন দাখিল করছেন না বলেই বোর্ড সভায় সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে ভারতীয় ক্রিকেটের সফলতম সাবেক এই অধিনায়কের সভাপতি হওয়া এখন আনুষ্ঠানিকতাই মাত্র।
সভাপতি হতে যাচ্ছেন, এই খবর নিশ্চিত করেছেন সৌরভ নিজেও। এরমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছেন কর্মপরিকল্পনা। তবে কোন শর্তেই কি পাচ্ছেন এমন দায়িত্ব? ক্ষমতাসীন দলকে নিজের ভাবমূর্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা দিবেন নাকি কলকাতার মহারাজা? দৈনিক আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘একেবারেই এমন কিছু (বিজেপির হয়ে প্রচারণা) নয়। কেউই এই ব্যাপারে আমাকে কিছু বলেনি।’
অর্থনৈতিক দুর্নীতির কারণে বেশ কিছু দিন থেকেই সমালোচনায় ছিল বিসিসিআই। বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের খবরদারিও অন্যান্য দেশের কাছে ছিল অস্বস্তির কারণ। এসবের মধ্যে নৈতিক স্খলনের দায়ে ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ আদালত বোর্ডটির সভাপতি পদ থেকে অনুরাগ ঠাকুরকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সিকে খান্না দায়িত্বে আছেন। তার জায়গাতেই বসতে যাচ্ছেন ‘প্রিন্স অব কলকাতা’। আপাতত সৌরভের লক্ষ্য ফেরাতে হবে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বোর্ডের সুনাম, ‘বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই সময়ে প্রেসিডেন্ট হতে পারায় খুশি। কিছু করার জন্য দারুণ সুযোগ পেয়েছি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হোক বা অন্য ভাবেই হোক, এটা মস্ত বড় দায়িত্ব। কারণ, বিসিসিআই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্থা। ভারত হল ক্রিকেটের পাওয়ারহাউস। এই দায়িত্ব তাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং।’
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া সৌরভ ২০১২ সালে ছেড়ে দেন সব ধরনের খেলা। এরপর সংগঠক হিসেবে শুরু করেন নতুন ক্যারিয়ার। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সভাপতি হিসেবে পাঁচ বছর ধরে দায়িত্বে আছেন, কুড়িয়েছেন সুনাম। অধিনায়ক হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দেওয়ার নায়ক সৌরভই পেতে যাচ্ছেন দেশটির ক্রিকেটের সবচেয়ে উঁচু আসন। কিন্তু অতবড় পদের চেয়েও দেশের হয়ে ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করাই এখনো রাখছেন এগিয়ে, ‘দেশের অধিনায়ক হওয়ার ব্যাপারই আলাদা। সেটার সঙ্গে কোনও কিছুর তুলনা হয় না। তবে আমি কখনও ভাবিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হতে পারব।’
আপাতত সৌরভের দায়িত্বের মেয়াদ ১০ মাস। এরপর তিন বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ‘কুলিং অফে’ চলে যেতে হবে তাকে। ভারতীয় ক্রিকেটে লোঢা সংস্কার অনুসারে কোন ব্যক্তি টানা ছয় বছর বোর্ড বা রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার এক বা একাধিক পদে থাকতে পারবেন না ।
তবে এই অল্প সময়ের মধ্যে বেশ বড় একটা কাঠামোগত বদল আনতে চান প্রথম বাঙালি হিসেবে ভারতের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনে বসতে যাওয়া সৌরভ, ‘এটাই নিয়ম। আমাদের সেটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। আমার প্রথম কাজ হবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের দিকে নজর দেওয়া। এর আগে এই ব্যাপারে সিওএ-কে অনুরোধও করেছিলাম। কিন্তু ওরা শোনেনি। রঞ্জি ট্রফির দিকেও ফোকাস থাকবে। ক্রিকেটারদের আর্থিক স্বার্থের ব্যাপারটা দেখতে হবে।’
Comments