শিশু নির্যাতনকারীর ক্ষমা নেই: প্রধানমন্ত্রী

PM-1.jpg
১৮ অক্টোবর ২০১৯, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রতিটি শিশুর জন্য সুন্দর ভবিষ্যতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশু হত্যা এবং নির্যাতনে জড়িতদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি ভোগ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে যারা শিশু নির্যাতন বা শিশু হত্যা করবে তাদের কঠোর থেকে কঠোরতম সাজা পেতে হবে, অবশ্যই পেতে হবে।”

তিনি বলেন, “এ ধরনের অন্যায়-অবিচার কখনই বরদাশত করা হবে না।”

প্রধানমন্ত্রী আজ (১৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “আমরা চাই আমাদের শিশুরা আর কখনই যেনো এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। প্রত্যেকটি শিশু যেনো সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। আর প্রতিটি শিশুর জীবন যেনো অর্থবহ হয়। তা নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭৫ এর খুনিদের বিচার না করে বরং আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে সে সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে খুনিদের পুরস্কৃত করা শিশু ও নারী হত্যাসহ হত্যা, খুন এবং নির্যাতনকে উৎসাহিত করা হয়।”

তিনি বলেন, “আমি আমার বাবা, মা-ভাইয়ের খুনিদের বিচার চাইতে পারিনি, এমনকি একটি মামলাও আমাদের করতে দেওয়া হয়নি।”

সম্প্রতি সমাজে গর্হিত অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে একজন বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন পিতার নিজের শিশু পুত্রকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেদিন (’৭৫ এর ১৫ অগাস্ট) নারী-শিশুসহ জাতির পিতা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিচার হলে সমাজে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারতো না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা ‘শিশু অধিকার আইন’ প্রণয়ন করে যান। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করে নীতিমালা, আইন, শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ তাদের বেড়ে ওঠা, খেলাধুলাসহ সবকিছুর ব্যবস্থাই ধীরে ধীরে করেছি।”

শিশুদের ভেতরকার মেধা, মনন ও শক্তিকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়াই তার সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একইসঙ্গে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্নভাবে আমাদের শিশুরা যাতে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য কম্পিউটার শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রযুক্তি শিক্ষাসহ সবধরনের শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।”

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. রকিবুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন। সংগঠনের সদস্য সচিব মাহমুদুস সামাদ, উপদেষ্টা তরফদার রুহুল আমিন এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম শহীদুল্লাহ ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত সারাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি এবং সারাদেশ থেকে আগত শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিশুরা যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজ না করে, সেই ধরনের ব্যবস্থাও তার সরকার নিয়েছে। এমনকি তাদেরকে শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে, এমনকি ঝরে পরা শিশু এবং যারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলো, সেসব শিশুদেরও শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আর যারা এতিম এবং প্রতিবন্ধী ও অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্যও কর্মসূচি নিয়েছে।”

তিনি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের আপন করে নিয়ে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্যও অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আজকে এখানে যেসব শিশুরা উপস্থিত রয়েছে তাদেরকে একটা কথাই বলবো, তোমাদের আশেপাশে যখন কোনো প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক বা দরিদ্র শিশু দেখবে তাদেরকে কখনও অবহেলা করো না। তাদেরকে আপন করে নিও। তাদের পাশে থেকো, তাদেরকে সহযোগিতা করো। কারণ তারাও তোমাদের মতোই একজন। যেনো কোনভাবেই তারা অবহেলার শিকার না হয়।”

তিনি ছোটবেলার শিক্ষা ‘কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না’র প্রসঙ্গও এ সময় উল্লেখ করে বলেন, “আসলে এটা করা নিষ্ঠুরতা, এটা বলা অমানবিকতা। আমাদের শিশুরা নিশ্চয়ই তা করবে না।”

বক্তৃতাপর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেন। রাসেলকে ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট কালরাতে জাতির পিতার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতক চক্র।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

12m ago