ইমরানকে ক্ষমতা ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

দীর্ঘ আন্দোলনের পর পাকিস্তানের ক্ষমতার আসনে ইমরান খান বসেছেন মাত্র এক বছর হলো। এরই মধ্যে তাকে ক্ষমতা ছাড়ার ৪৮-ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলো। সেই বেঁধে দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায়।
১ নভেম্বর ২০১৯, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পদত্যাগের দাবিতে ইসলামাবাদে ধর্মীয় ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আয়োজিত ‘আজাদি পদযাত্রা’য় অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ আন্দোলনের পর পাকিস্তানের ক্ষমতার আসনে ইমরান খান বসেছেন মাত্র এক বছর হলো। এরই মধ্যে তাকে ক্ষমতা ছাড়ার ৪৮-ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলো। সেই বেঁধে দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায়।

‘নয়া পাকিস্তানের’ স্লোগান নিয়ে ইমরান ক্রিকেট তারকা থেকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা হন ১৯৯৬ সালে। তারপর প্রধানমন্ত্রী হন ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট। তার নির্বাচিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু, ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অভিযোগ উঠতে থাকে দেশ পরিচালনায় তার ব্যর্থতা নিয়ে।

বিরোধীদের মতে, ইমরান গত এক বছরে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি যা ‘নতুন পাকিস্তান’ তৈরির পথে শুভ সূচনা হিসেবে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কেননা, দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা দিনকে দিন আরও নাজুক হচ্ছে বলে প্রায়শই মত দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সব বিরোধীদল এক জোট হয়েছে ইমরানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে। সেই লক্ষ্যে রাজধানী শহর ইসলামাবাদে চলছে তিনদিনের সরকারবিরোধী আন্দোলন। চলছে অবস্থান কর্মসূচী। সারাদেশ থেকে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে যোগ দিচ্ছেন সেই সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচীতে।

ইমরান-বিরোধী আন্দোলনের আয়োজক জামায়াত উলামা-ই-ইসলামের (জেইউআই-ফজলুর) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান সমাবেশের বক্তব্যে বলেন, “ইমরানের পদত্যাগ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা ঘরে ফিরবে না। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকবো।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কীভাবে এই সমাবেশ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা করবো, যখন দেখি বিক্ষোভকারীরা এখনো এতে যোগ দিচ্ছেন।”

‘আজাদি পদযাত্রা’ শিরোনামের এই ইসলামাবাদমুখি সরকার-বিরোধী আন্দোলন বন্দরনগরী করাচি থেকে শুরু হয় গত ২৭ অক্টোবর। রাজধানী শহরে এসে পৌঁছায় তিনদিন পর।

ফজলুর রহমান দাবি করেন তিনি পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-নওয়াজ) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনসহ সব বিরোধীদলের সঙ্গে কথা বলে ‘আজাদি পদযাত্রা’র লক্ষ্য ঠিক করেছেন। তা হলো, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ’ এবং ‘সেনা হস্তক্ষেপ ছাড়া নতুন নির্বাচন’। পদযাত্রার শুরুতে সিন্ধু প্রদেশ থেকে পিপিপি এবং পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে পিএমএল (এন) সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু, দেশটির প্রভাবশালী ডন পত্রিকা সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, পিপিপি ও এমএল (এন) আয়োজক জেইউআই-(এফ)’র নেতাদের পরামর্শ দিয়ে বলেছে, তাদের অবস্থান ধর্মঘট যেনো দীর্ঘ না হয়। এমনকী, এখন গণপরিষদ থেকে সদস্যদের গণপদত্যাগের ভাবনাটিরও বিরোধিতা করছেন তারা।

কী ঘটতে পারে

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আজ সন্ধ্যায় বিরোধীদের দেওয়া ৪৮-ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই ইমরান খান পদত্যাগ না করলে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে।

ইসলামাবাদে গণজমায়েতের ফলে ইমরান খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে প্রস্তুত থাকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে জনগণ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

সরকারের বাধার মুখে পদযাত্রার সমর্থক বিরোধী দলগুলো বৈঠক করেছে আয়োজক সংগঠনের নেতা আকরাম দুররানির বাসায়। তারা আন্দোলনের সার্বিক পরিস্থিতি ও সরকারের আলোচনার আহ্বান দিয়ে কথা বলেছেন। এরপর, সাংবাদিকদের জানানো হয়, গণপরিষদ থেকে গণপদত্যাগ, দেশজুড়ে কঠোর অবরোধ, মহাসড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া- সবকিছুই বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

ইমরান যা ভাবছেন

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলোর মহাজমায়েত ও আল্টিমেটাম প্রতি ইমরান দেখিয়েছেন অনড় ভাব। বলছেন, পদত্যাগের কোনো কারণ নেই। ডনডটকম জানায়, দিন দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী গিলগিট-বাল্টিস্তানে এক সমাবেশে ‘আজাদি পদযাত্রা’য় অংশ নেওয়া জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন, “তোমাদের খাবার শেষ হয়ে গেলে জানাবে, আমরা খাবারের ব্যবস্থা করবো। কিন্তু, তোমাদের নেতাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

বিরোধীদের তিনি আরও বলেন, “ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে পাকিস্তানে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। এটি নতুন পাকিস্তান। যতোক্ষণ ইচ্ছা তোমরা অবস্থান করতে পারো।”

ইমরানের মতে, তার সরকারের বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে যদি পিপিপি সমর্থকদের বলা হয়, তোমরা কেনো ইসলামাবাদে এসেছো, তাহলে তারা বলবে- দেশে মুদ্রাস্ফীতি; যদি পিএমএল (এন)’র সমর্থকদের বলা হয়, তোমরা কেনো এসেছো, তাহলে তারা বলবে যে- তারা জানে না। আর যদি জেইউআই (এফ)’কে বলা হয়, তারা বলবে পাকিস্তানে ‘ইহুদি ষড়যন্ত্র’ চলছে।

সরকার ও সরকারবিরোধীদের পালটা-পাল্টি বক্তব্যের পর পাকিস্তানে কী ঘটে তা দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago