রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’

কেবল বুয়েটেই নয়, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এবার সন্ধান পাওয়া গেছে শিক্ষার্থী নির্যাতনে ব্যবহৃত একটি কক্ষের। প্রতিষ্ঠানটির ১১১৯ নম্বর কক্ষকে ছাত্রলীগ বানিয়েছিল ‘টর্চার সেল’।

কেবল বুয়েটেই নয়, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এবার সন্ধান পাওয়া গেছে শিক্ষার্থী নির্যাতনে ব্যবহৃত একটি কক্ষের। প্রতিষ্ঠানটির ১১১৯ নম্বর কক্ষকে ছাত্রলীগ বানিয়েছিল ‘টর্চার সেল’।

আজ (৩ নভেম্বর) দুপুরে কক্ষটি থেকে বেশ কিছু রড, লাটি ও লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে এনে রড ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা হতো। চলতো ফ্রি স্টাইলে মারধর।

বুয়েটের মতো এখানেও ‘টর্চার সেল’-এ শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগের তীর গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের দিকে।

গতকাল ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দিলে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচারসহ ছয় দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন করেছেন তারা।

ভয় ভেঙে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। তাদের ভাষ্যে বেরিয়ে এসেছে টর্চার সেলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ভীতিকর সব কাহিনী।

এক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কোনো বিষয়ে কথা বললে বা তাদের কোনো অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে এই কক্ষে এনে মারধর করা হতো।

তার কথায়, “এখানে ওরা (ছাত্রলীগ) একটি গণরুম বানিয়েছে, যেটি আসলে টর্চার সেল। ওরা এখানে এসে আড্ডা মারে। ওদের যতো অপকর্ম আছে এখানেই প্ল্যান হয়, এখানেই সংগঠিত হয়।”

এমনকি, শিক্ষকের সামনেই ক্লাস থেকে সাধারণ ছাত্রদের ধরে এখানে এনে নির্যাতন করা হতো বলেও জানান তিনি।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মো. নুর উল্লাহ জানান, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে একটি নির্দিষ্ট চত্বরে বসে এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের প্রায়ই মারধর করে।

এর আগে, এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করার সময় প্রতিবাদ করায় তার ওপরও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আক্রমণ চালায় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে বাধা দিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষকদের চেয়ার তুলে মারতে পর্যন্ত আসে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন অবৈধ দাবি নিয়ে এসে সবসময় ঝামেলা করে বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ।

তিনি জানান, পরীক্ষায় শূন্য পেলেও পাশ করিয়ে দিতে হবে, একদিনও ক্লাসে আসেনি এমন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতে হবে, এমনসব অযৌক্তিক দাবি করত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

তিনি বলেন, “এই গ্রুপের (ছাত্রলীগ) ছেলেরা কেউই ক্লাস করে না। প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাকও পরে না।”

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত কল্যাণ তহবিলের টাকা শতভাগ ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েদের দিতে হবে এমন দাবি এসেছিল জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, “প্রথমদিকে আমাকে ৬০ শতাংশ টাকা তাদের (ছাত্রলীগ) দিয়ে বাকিটা দরিদ্র ছাত্রদের দিতে হতো। এর আগে, এখানে কল্যাণ তহবিলে দেওয়ার কোনো সংস্কৃতি ছিল না, ওরাই সব নিয়ে যেত।”

এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: 

অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের আরও ৪ নেতাকর্মী

অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার ঘটনায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার ভিডিও ফুটেজে ৫ জন সনাক্ত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিল ছাত্রলীগ

Comments

The Daily Star  | English

Labour bill sent to freezer

In an almost unheard-of move, President Mohammed Shahabuddin has sent a bill back to parliament for reconsideration and the bill is the newly amended labour law.

2h ago