দায় মেটালেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ

ছবি: এএফপি

নাহ, এবার আর ভুল করেননি তারা। দলের স্কোর যখন সমান, তখনই একটি বিলাসী শট খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। আর এবার শটে ছিল দারুণ আত্মবিশ্বাসের ছাপ। সীমানার বাইরেই আছড়ে পড়ে বল। তাতে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হয় ভারত বধ। আর আগের ওভারে দারুণ সব শট খেলে দলের জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমই। যেন অদৃশ্য কোনো দায় মেটালেন দলের সেরা এ দুই ব্যাটসম্যান।

রবিবার (৩ নভেম্বর) দিল্লিতে জয়ের ভিতটা অবশ্য শুরু থেকেই গড়ে এসেছেন ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে সৌম্য সরকারের সঙ্গে মুশফিকের ৬০ রানের জুটিতেই জয় দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু সৌম্যর বিদায়ে কিছুটা শঙ্কা জাগে। বাংলাদেশ তখন জয় থেকে ৩৫ রান দূরে। ওভার বাকি ছিল ৩টি। হাতে ৭ উইকেট থাকায় কাজটা খুব একটা কঠিন কিছু ছিল না। তখন মাঠে নামেন মাহমুদউল্লাহ। আর তাতেই ২০১৬ এর স্মৃতি যেন ফিরে আসে।

তখনই দেশের হাজারো ক্রিকেট ভক্তের মনে নিশ্চিতভাবে উঁকি দিচ্ছিল সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা। শেষ ৩ বলে যখন ২ রান দরকার, তখন অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ। শেষ ৩ বলেই টাইগাররা হারায় ৩ উইকেট। মনে আসার বড় কারণ অবশ্য উইকেটের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে দেখেই। বেঙ্গালুরুতে আউট হওয়া শেষ তিন ব্যাটসম্যানের দুজন ছিলেন তারা। হারের দায়টা যে তাই এ দুই ব্যাটসম্যানের কাঁধেই চেপেছিল। তিন বছর পর ভারতের মাঠেই জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়লেন সে দুই ব্যাটসম্যানই।

বেঙ্গালুরুতে সেদিন বোলারদের নৈপুণ্যে ভারতকে ১৪৬ রানে বেঁধে ফেলেছিল বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় এক সময় বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৪৫ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। তখনও বাকি ৩টি বল। বাংলাদেশের জয় তখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কারণ উইকেটে ছিলেন দুই সেট ব্যাটসম্যান মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। দেশের সেরা ব্যাটসম্যানও তারা। কিন্তু সে সময় হার্দিক পান্ডিয়ার খাটো লেংথের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন মুশফিক। পরের বলে লো ফুলটস একই ভঙ্গিতে খেলে একই জায়গায় একই ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। অথচ চাইলেই তারা সিঙ্গেলসে ভর করে জয় নিশ্চিত করতে পারতেন।

এবারে শেষ ২ ওভারে যখন ২২ রান দরকার, তখন কাজটা ২ বল হাতে রেখেই সেরে দিলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। ১৯তম ওভারেই মুশফিক কাজটা সেরেছেন মূলত। তৃতীয় বলে চার। পরেরটি তার ট্রেডমার্ক শর্ট স্কুপ। তাতে আসে তার ফিফটি। তখন কিছুটা উদযাপন করলেন এ ব্যাটসম্যান। বেঙ্গালুরুতেও সেবার দুটি চার মেরে উদযাপন করেছিলেন। তার জন্য পরে ট্রলের শিকারও হয়েছেন অনেকবার। তবে এদিন পরের দুই বলে যখন আরও দুটো চার মারেন, তখন শঙ্কা কেটে যায় অনেকটাই। কিন্তু আসলেই কি কেটে যায়?

শেষ ওভারে তখন দরকার মাত্র ৪ রানের। প্রেক্ষাপট হয়তো বেঙ্গালুরুর সে ম্যাচ থেকে কিছুটা ভিন্ন। হাতে ৭ উইকেট আর উইকেটেও সেট দুই ব্যাটসম্যান থাকায় হয়তো যে কোনো সংস্করণের ক্রিকেটেই এটা খুবই সহজ ব্যাপার। কিন্তু বাংলাদেশ যে এমনভাবে অনেকবারই জয়ের খুব কাছে এসে তরী ডুবিয়েছে। আর প্রতিপক্ষ যখন ভারত, সেখানে এমন উদাহরণ ভুরিভুরি। তা সে যে কোনো পর্যায়েই হোক। বয়সভিত্তিক দল কিংবা এ দল। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল। তবে এবার জুজু কাটানো গিয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিতভাবে এ জয়টি অনন্য। কারণ নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় এমনিতেই দেশের ক্রিকেট টালমাটাল। সঙ্গে দিল্লির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেলা। আর ভারত জুজু তো ছিলই। তবে কোনো মাইলফলকের ম্যাচে বরাবরই ভালো খেলে বাংলাদেশ। এদিনও তারা ধরে রাখল সে ধারা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক হাজারতম ম্যাচে প্রথমবারের মতো ভারত জয়। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের ক্রিকেট যে নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল নয়, তা কিছুটা হলেও প্রমাণ করতে পেরেছে টাইগাররা। গুমোট ভাব কেটে এসেছে দারুণ স্বস্তিও!

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

13m ago