সেই পুরনো রোগেই শেষ বাংলাদেশ

ম্যাচটা যখন টি-টোয়েন্টি, তখন বাংলাদেশের দুর্বলতা মোটামুটি সবারই জানা। এক বিভাগ ভালো হলো তো আরেক বিভাগের যাচ্ছেতাই অবস্থা। তবে দিল্লিতে যে ভারতকে তিন বিভাগেই পরাস্ত করে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ! তাতে মনে হয়েছিল হয়তো বদলে যেতে শুরু করেছে তারা। কিন্তু এক ম্যাচে যেতেই এদিন তিন বিভাগেরই নাজেহাল অবস্থা ফের দেখা গেল টাইগারদের।
ছবি: এএফপি

ম্যাচটা যখন টি-টোয়েন্টি, তখন বাংলাদেশের দুর্বলতা মোটামুটি সবারই জানা। এক বিভাগ ভালো হলো তো আরেক বিভাগের যাচ্ছেতাই অবস্থা। তবে দিল্লিতে যে ভারতকে তিন বিভাগেই পরাস্ত করে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ! তাতে মনে হয়েছিল হয়তো বদলে যেতে শুরু করেছে তারা। কিন্তু এক ম্যাচে যেতেই এদিন তিন বিভাগেরই নাজেহাল অবস্থা ফের দেখা গেল টাইগারদের।

রাজকোটে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভারতের কাছে স্রেফ উড়ে গেছে বাংলাদেশ। ২৬ বল বাকি থাকতেই হার। আগেই জানা ছিল এ মাঠের বৈশিষ্ট্য। হবে রানবন্যা। মাঠের ইতিহাস এমন কথাই বলে। এ ম্যাচের আগে আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম ইনিংসের গড় রান ছিল ১৯১। সেখানে টাইগাররা করে মোটে ১৫৩ রান। মাঝারি সংগ্রহ নিয়ে প্রয়োজন ছিল শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরা। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয় টাইগাররা। দুটি ওয়াইড দিয়ে ইনিংস শুরু করেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ক্ষুরধারহীন বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংও ছিল যাচ্ছেতাই। ফলে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হার মানতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা আনে ভারত।

এদিন ক্যারিয়ারের শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আর শততম ম্যাচটা রাঙিয়ে রাখলেন দারুণ সব শট খেলে। নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্রুততম (২৩ বলে) ফিফটি করেন। একটু দেখে খেললে হয়তো সেঞ্চুরি ম্যাচে রানের সেঞ্চুরিও পেয়ে যেতেন। আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ৮৫ রান। মাত্র ৪৩ বলের ঝড়ো এ ইনিংসে চার ও ছক্কা মেরেছেন সমান ৬টি করে। ইনিংসের দশম ওভারে তো ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেনকে। প্রথম তিন বলেই ছক্কা। পরের বলেও হাঁকাতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু ব্যাটের কানায় লাগলে বাউন্ডারি মিস করেন তিনি।

ওপেনার শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে রোহিত গড়েন ১১৮ রানের জুটি। তাতেও গড়া হয় নতুন বিশ্বরেকর্ড। এ দুই ব্যাটসম্যান এ নিয়ে চতুর্থবার শতরানের জুটি গড়লেন টি-টোয়েন্টিতে। তিনবার শতরানের জুটি গড়তে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়ান শেন ওয়াটসন ও ডেভিড ওয়ার্নার। ওয়াটসন অবসর নিয়েছেন, আর রোহিত-ধাওয়ানরা এখনও খেলছেন। নিজেদের রেকর্ডকে সমৃদ্ধ করার আরও অনেক সুযোগ মিলবে তাদের।

টাইগার বোলারদের মধ্যে এদিন ব্যতিক্রম ছিলে কেবল ২০ বছর বয়সী তরুণ লেগ স্পিনার আমিনুলই। স্নায়ুচাপ সামলে রোহিত-ধাওয়ানদের এমন আগ্রাসী ব্যাটিংটের মাঝেও বল ফেলেছেন সঠিক জায়গাতেই। সাফল্যও মিলেছে তার। দুই ওপেনার শিকার হয়েছেন তার আঙুলের জাদুর। প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন ১৩ রান। তারপরও চার ওভারে ২৯ রান খরচায় আমিনুল পেয়েছেন ২টি উইকেট। অথচ ঢের বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে এলোমেলো বোলিং করেছেন প্রায় সব বোলারই।

এছাড়া লড়াইটা দেখা গিয়েছিল ম্যাচের একেবারে শুরুতে। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে দুই ওপেনার বেশ ভালো ব্যাটিংই করেছিলেন। রানের গতি হয়তো উড়ন্ত ছিল না, তবে ধারাবাহিকভাবেই সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। প্রথম সাত ওভারে বিনা উইকেটে আসে ৫৯ রান। দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের পর উইকেটে ভালো সেট হয়ে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকারও। কিন্তু সমস্যা ওই পুরনোই। সেট হয়ে ইনিংস লম্বা করতে না পারা। লিটন তো এদিন দুটি সহজ জীবনও পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি।

তারপরও যে গতিতে আগাচ্ছিল, তাতে মনে হয়েছিল, স্কোরটা হয়তো ১৭০ রানের বেশিই করবে বাংলাদেশ। কিন্তু কিসের কী! ছয়, সাত ও আট নম্বরে নামা কোনো ব্যাটসম্যানই বল মোকাবিলার চেয়ে রান বেশি করতে পারেননি। আফিফ ৮ বলে ৬, মোসাদ্দেক ৯ বলে ৭ এবং আমিনুল ৫ বলে ৫ রান করেন। ফলে ইনিংসের শেষ তিন ওভারে এসেছে মাত্র ১৭ রান।  ১৮ ও ১৯তম ওভারে আসে চার রান করে মোট আট রান। ডেথ ওভার ব্যবহার করতে না পারার সেই পুরনো ব্যর্থতাই জেঁকে ধরে টাইগারদের।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল এদিন ইনিংসের ১৩তম ওভারে। লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেলের সে ওভারের প্রথম বলেই প্রিয় শট স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহিম। আর শেষ বলে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন দিল্লি জয়ের পার্শ্বনায়ক সৌম্যও। এরপরই থেমে যায় রানের গতি। অথচ এর আগে ১২ ওভারেই তাদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৯৭ রান। সেট তিন ব্যাটসম্যান লিটন, নাঈম ও সৌম্য যথাক্রমে করেন ২৯, ৩৬ ও ৩০ রান করেন।

Comments

The Daily Star  | English

BNP places several demands to Yunus, including removal of 'one or two' members of interim govt

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir led the six-member delegation at the State Guest House Jamuna.

3h ago