তরুণ নাঈমের অমন ব্যাটিংয়ের পরও পারল না বাংলাদেশ

Mohammad Naim Sheikh

মাঠ ছিল শিশিরে ভেজা। স্পিনারদের জন্য বল গ্রিপ করা ছিল শক্ত। তবু ১৭৫ রান টপকানো যেকোনো পরিস্থিতিতেই কঠিন। অথচ শুরুর ধাক্কার পর তরুণ নাঈম শেখের ব্যাটে সেই কঠিন পথ অনেকটাই সহজ করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে শেষ পাঁচ ওভারে মেলাতে হতো ৫০ রানের সমীকরণ। কিন্তু আবারও শেষটা করতে না পারায় পুরনো রোগ জেগে উঠায় হতাশায় ডুবতে হলো বাংলাদেশকে।

আগের রোববারে দিল্লিতে মিলেছিল দারুণ জয়। নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে আরেক রোববারে সুযোগ ছিল সিরিজ জিতে নেওয়ার। বোলিংয়ে একাধিক সহজ ক্যাচ ফসকানো, আলগা বোলিংয়ে রান দেওয়ার পর শেষের ব্যাটিংয়ে তা আর হলো না। ভারতের ১৭৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ করতে পারল  ১৪৪ রান।  হারল  ৩০  রানে।  তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জম্পেশ লড়াইয়ের পর স্বাগতিকরা জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। 

শুরুতে জড়সড় থাকা নাঈম এদিন ছিলেন অনবদ্য। খেলেছেন ভয়ডরহীন, চিনিয়েছেন সামর্থ্য। কিন্তু তার ৪৮ বলে ৮১ কাজে লাগল কই। ব্যর্থ বাকিরা, অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহও নিতে পারেননি দায়িত্ব। 

অথচ প্রতিপক্ষে সেরা বোলার যুজভেন্দ্র চেহেলকে এদিন বিবর্ণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ, সুবিধা করতে দেয়নি ওয়াশিংটন সুন্দরকে। কিন্তু শিভম দুভে , দীপক চাহাররা মিলে পেস বলেই নিয়ে নেন ম্যাচের লাগাম। দুভে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রো এনে ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট। চাহার আঁটসাঁটও বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের ভুগানোর পর টেল এন্ডারদের মুড়ে নেন ৭ রানে ৬ উইকেট।

১৭৫ রানের কঠিন লক্ষ্য। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের চাপ। খলিল আহমেদের প্রথম ওভারে লিটন দাস ফ্লিক আর কাভার ড্রাইভে দুই চারে শুরুটা করেছিলেন দারুণ। আরেক প্রান্তে নাঈম শেখ ডট বলে চাপ বাড়নোয় লিটন দীপক চাহারকে পুল করতে গিয়ে করেন ভুল। টাইমিং গড়বড় করে ধরা পড়েন মিডউইকেটে।  বোলিংয়ে দারুণ করা সৌম্য সরকার ঠিক পরের বলেই কুপোকাত। চাহারের বলে সোজা ক্যাচ তুলে দেন মিড অফে।

১২ রানে ২ উইকেট খুইয়ে তখনই যেন ম্যাচের বাইরে বাংলাদেশ। চারে নামার কথা ছিল মুশফিকুর রহিমের। লিটন আউটের পরই কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ড্রেসিং রুমে ঈশারা দিয়ে পাঠান মোহাম্মদ মিঠুনকে। দুজনেই শুরুতে রানের গতি করে দিচ্ছিলেন মন্থর।

এক পর্যায়ে ১৫ বলে ৮ রান ছিল নাঈমের। এরপর ভোলপাল্টান তিনি। পুষিয়ে দেন পুরোটাই। প্রথমে যুজভেন্দ্র চেহেলকে টানা তিন বাউন্ডারি  মেরে কমান চাপ। ওয়াশিংটন সুন্দরকে ছক্কায় করেন সীমানাছাড়া। শিভম দুভেও নাঈমের আগ্রাসণে আছড়ে পড়েন বাউন্ডারির বাইরে

প্রথম দুই ম্যাচে ত্রিশের ঘরে ফিরে গেলেও এদিন তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। সুন্দরের বলে চার মেরে ৩৪ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। নাঈমের কারণেই প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৮ রান দেওয়া সুন্দর পরের দুই ওভারে দিয়ে দেন ২৬ রান।  তখন ম্যাচ জিততে ওভারপ্রতি প্রায় ১০ করে নেওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের।

চেহেলকে চার-ছক্কায় পিটিয়ে ওভারপ্রতি রান নেওয়ার  চাহিদা আরও কমাতে থাকেন তরুণ নাঈম। নাঈমের সঙ্গে বুড় জুটি গড়লেও চারে নামা মিঠুন আনতে পারছিলেন না দ্রুত রান।  নিজের উপর চাপ কমাতে দুভেকে তুলে মারতে গিয়ে শেষ হয় তার ২৯ বলে ২৭ রানের ইনিংস। ঠিক পরের বলেই বড় সর্বনাশ হয়ে যায় বাংলাদেশের। থার্ড ম্যানে ফেলে এক রান নিতে চেয়েছিলেন ক্রিজে আসা মুশফিক। কিন্তু ইনসাইড এজ হয়ে ভেঙে যায় তার স্টাম্প। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে তখন আবার চাপে বাংলাদেশ।

তবু রান বলের ব্যবধান ছিল না নাগালের বাইরে। কিন্তু শিভম দুভের এক ওভারে হয়ে যায় সব এলোমেলো। দারুণ খেলতে থাকা নাঈম দুভের ইয়র্করে হয়ে যান বোল্ড। প্রথম ১৫ বলে ৮ করা এই বাঁহাতি পরে সব পুষিয়ে ৪৮ বলে ফেরেন ৮১ রান করে। তার পরের বলেই আফিফ হোসেন ক্যাচ উঠিয়ে দেন দুভেকে।

জেতার পথে থাকা দল হুট করে ছন্দে হারিয়ে তখন এলোমেলো। সব ভার গিয়ে পড়ে অধিনায়কের ঘাড়ে। কিন্তু তিনিও চেহেলের গুগলিতে কাবু হয়ে বোল্ড হলে লেখা হয়ে যায় ইতিহাস। পরে টেল এন্ডারদের মুড়ে হ্যাটট্রিকসহ ছয় উইকেট নিয়ে বাকিটা সেরেছেন চাহার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত:   ২০ ওভারে ১৭৪/৫  (রোহিত ২ , শেখর ১৯, রাহুল  ৫২, শ্রেয়াস ৬২ , ঋষভ ৬, মানিষ ২১, দুভে ; আল-আমিন ১/২২, শফিউল ২/৩২, মোস্তাফিজ ০/৪২, বিপ্লব ০/২৯, সৌম্য ২/২৯, আফিফ ০/২০ )

বাংলাদেশ:  ১৯.২ ১৪৪   (লিটন ৯, নাঈম ৮১, সৌম্য, মিঠুন ২৭, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৮, আফিফ ০, আমিনুল , শফিউল ৪, মোস্তাফিজ ১, আল-আমিন ০  ; খলিল ০/২৭, সুন্দর ০/৩৪,  চাহার ৬/৭,  চেহেল ১/৪৩, দুভে ৩/৩০ )

ফল: ভারত ৩০ রানে জয়ী।

সিরিজ: ভারত ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Former Narayanganj mayor Selina Hayat Ivy arrested

She was arrested around 5:45am today following a night-long raid at her Deobhog residence

1h ago