একাশি বছর বয়সেও হিল্লি-দিল্লি ঘুরে গ্যালারি মাতান তিনি
বয়স পেরিয়েছে ৮০। এই বয়সে সাধারণত শুয়ে বসেই কাটায় মানুষ। কিন্তু ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নূর বক্সের মনে হলো তিনি কুয়োর ব্যাঙ হবেন না। বরং বেরিয়ে পড়বেন। নানান রকমের মানুষ দেখবেন, দেখবেন বহু জনপদ। তীব্র ইচ্ছা আর ক্রিকেটপ্রেমে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থেকে হিল্লি দিল্লি ঘুরে চলে এসেছেন মধ্যপ্রদেশে। গ্যালারিতে বসে উড়াচ্ছেন বাংলাদেশের পতাকা।
টি-টোয়েন্টি সিরিজেই হাতে একতারা, মাথায় লাল-সবুজ পতাকা বাধা নূর বক্সের ছবি দেখা গেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও। নূরবক্স হাজির টেস্ট সিরিজেও। মঙ্গলবার ইন্দোরে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন দেখছিলেন গ্যালারিতে বসে। সেখানেই শুনালেন তার এভাবে ঘুরে বেড়িয়ে ক্রিকেট দেখা আর এই বয়সে ঘুরে বেড়ানোর গল্প।
জানালেন ৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জলিলের অধীনে ১৯৭১ সালে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পান সেনাবাহিনীর চাকরি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আর সেনাবাহিনীর অবসরকালীন ভাতা পান প্রতিমাসে। এই ভাতার টাকা নিয়েই বেরিয়ে পড়েন খেলা দেখতে, ‘আমি ভাতা পাই। আমার ছেলে, ছেলের বউ চাকরি করে। টাকার কোন সমস্যা নাই। আমি নিজের টাকায় ঘুরি। তাদের বলেছি তোমরা তোমাদের খরচ কর। আমি আমার খরচ করব। ’
এবার বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের সূচি ঠিক হওয়ার খবর পেয়েই সাজান ভারত আসার পরিকল্পনা। বাসে, ট্রেনে ঢাকা থেকে কলকাতা। কলকাতা থেকে ফের ট্রেনে দিল্লি। দিল্লিতে দেখছেন প্রথম টি-টোয়েন্টি। দিল্লির খেলা শেষ করে আবার ট্রেন ধরে রজকোট। এভাবে নাগপুর হয়ে এখন ইন্দোরে আছেন নূর বক্স।
এই বয়সে এতখানি ভ্রমণের ঝক্কি কীভাবে নিচ্ছেন? প্রশ্ন শেষ হওয়ার সঙ্গেই তার জোরালো উত্তর, ‘আমার শরীরে শক্তি আছে না? আমার হার্ট ভালো। হার্ট ভালো বলেই সব জায়গায় ঘুরতে পারি। এই একটা ব্যাগ নিয়ে সব জায়গায় ঘুরে বেড়াই। দেখা গেল কোথাও হোটেলে উঠতে পারলাম না, টাকা পয়সা নাই। যেখানে জায়গা পাই সেখানেই শুয়ে পড়ি।’
এবারই প্রথম নয়। এর আগে একবার শ্রীলঙ্কা উড়ে গিয়েছিলেন খেলা দেখতে। ভারতেও আরও একবার এসে দেখেছেন আইপিএলের খেলা। নিজের ঘাঁটের পয়সা খরচ করে ছুটোছুটির পেছনে তার চিন্তার জায়গা খুব সরল, ‘আনন্দ লাগে, আনন্দ। লোকেদের দেখতে ঘুরতে আমার ভাল লাগে।’
কেবল আনন্দ নেওয়াই নয়। বাংলাদেশ দলের প্রতি নূর বক্সের আছে তীব্র টান। ভারত শক্তিশালী হলেও তার বিশ্বাস টি-টোয়েন্টি সিরিজের মতো টেস্টেও অন্তত এক ম্যাচে ভালো কিছু করবে বাংলাদেশ।
Comments