টেস্টের বাংলাদেশ তবে কোন উইকেটে সাবলীল?
দেশের বাইরে গতিময় উইকেটে খেলতে গেলে সমস্যা, দেশে স্পিনিং উইকেটেও পোহাতে হয় হ্যাপা। এবার ভারতে এসে মিলেছিল স্পোর্টিং উইকেট। যেখানে শুরুতে পেসাররা পান সুবিধা, বেলা বাড়লে আর টিকে গেলে, ব্যাটসম্যানদের জন্যও আছে রান। তবে এখানেও ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ঘণ্টা চারেক হাঁসফাঁস আর পড়িমরি হাবভাবের প্রদর্শনী দেখিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ইন্দোরে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৮.৩ ওভার টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ। রান মোটে ১৫০। ভারতীয় বোলাররা ছিলেন নিখুঁত, ছিলেন গতিময়, ছিলেন ধারালো। ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামিদের খেলা এই উইকেটে খুব সহজ নয়। তবে নিবেদন, দৃঢ়তা আর স্কিলের মুন্সিয়ানা থাকলে দুই সেশনে অলআউট হওয়ার মতোও কোনো মাইন পোঁতা ছিল না হল্কার স্টেডিয়ামের বাইশ গজে।
কদিন আগে দেশে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অতি টার্নিং উইকেট বানিয়ে ডুবে মরেছিল দল। রিস্ট স্পিনার খেলতে না পারার দৈন্য বেরিয়ে এসেছিল প্রকট হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে গতি আর বাউন্সে খেলার দীনতা আগেই দেখা গিয়েছিল। এবার মুভমেন্ট, গতি আর বুদ্ধিদীপ্ত আক্রমণেও হলো সেই একই হাল।
টেস্টের বাংলাদেশ ১৯ বছরে কতটা এগিয়েছে, আসলেই এগিয়েছে কিনা- এই প্রশ্ন ফের জোরদার হওয়ার দাবি রাখে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দুই, আড়াই সেশনে গুটিয়ে প্রথম দিনেই বোলিং করতে নামা। এরকম দৃশ্য তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে হরদম হচ্ছে। সেই ২০০৩ সালে যেমন হতো, ২০১৯ সালেও তাই।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। পুরো পয়েন্ট তুলে নিতে মরিয়া বিরাট কোহলির দল দেয়নি বিন্দুমাত্র জায়গা। সেরা আক্রমণ নিয়ে নেমেই বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। বাস্তবায়ন তারা করেছে খাপে খাপ মিলিয়ে।
ঘাসের ছোঁয়া আছে, সকালের আর্দ্রতায় এই উইকেটেও ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন মুমিনুল হক। অবশ্য পরে ব্যাটিং নিয়ে ভারতের রানের নিচে চাপা পড়ারও কোনো মানে ছিল না। টসের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। তবে প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করা যাবে ব্যাটিংকে।
সাদমান ইসলামকে নিয়ে ওপেন করতে নেমে শুরুতে ইমরুল কায়েস যে ব্যাটিং করেছেন, তাতেই বাকি ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে চলে যাওয়ার কথা। গতি, বাউন্স যেন চোখেই দেখেননি, মুভমেন্টেও হয়েছেন দিশেহারা। কুল না পেয়ে কেবল ধুঁকেছেন এবং বাকিদের বিশ্বাস টলিয়ে আউট হয়েছেন শটের বাজে প্রয়োগে।
ইশান্তের আচমকা লাফানো বল নরম হাতে খেললে বল মাটিতে পড়ত। কিন্তু তিনি শক্ত হাতে রক্ষণ করে ক্যাচ ওঠান স্লিপে। সাদমান ফেরেন ড্রাইভে প্রলুব্ধ হওয়া বলে। ইমরুলের পর দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ের উদাহরণ দেখান মোহাম্মদ মিঠুন। প্রতি বলেই আউট হওয়ার অবস্থা তার। এই মরি, এই মরি করতে করতে মোহাম্মদ শামির বলেই শেষ পর্যন্ত এলবিডাব্লিউতে যবনিকাপাত হয় মিঠুনের।
প্রথম সেশনে একমাত্র মুমিনুল ছিলেন সাবলীল। ক্রিজে এসে মুশফিকুর রহিমের অবস্থাও ছিল পড়িমরি দশা। বারকয়েক পরাস্ত হওয়ার পর উমেশকে স্লিপে ক্যাচও দিয়েছিলেন। কোহলি তা রাখতে পারেননি। পরে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলেও ক্যাচ দিয়ে বাঁচেন তিনি। ওই সময়টা পেরিয়ে মুমিনুলের সঙ্গে একটা জুটি হয়েছিল তার। চতুর্থ উইকেটে ৬৮ রানের এই জুটিই বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র অলঙ্কার।
লাঞ্চের পর কোনো প্রতিরোধই আর টেকেনি। ইশান্ত করলেন আগুন ঝরানো স্পেল, ওই সময়টায় উইকেট পেলেন না। তবে মনোবল ধসিয়ে দিলেন বাংলাদেশের। বারবার লাফিয়ে উঠল বল, ব্যাটের কাছ ঘেঁষে সাঁই সাঁই করে বেরিয়ে গেল ভয় ধরিয়ে। এর প্রভাবেই অশ্বিনের সোজা বলে মুমিনুল বোল্ড। তারপর ক্রিজে আসা মাহমুদউল্লাহ পেরেসান! বাকিরা পেসে ধুঁকেছিলেন, তিনি স্পিনেও নাজেহাল। কুঁকড়ে গেলেন, সেই চাপ আর কাটল না। অশ্বিনকে ৭ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে ১০ রানে অদ্ভুত সুইপ খেলে হয়েছেন বোল্ড। খানিক পরই প্রথম বলে বিদায় মেহেদী হাসান মিরাজেরও।
মুমিনুলের পর সাবলীল ব্যাট করেছেন কেবল লিটন। অশ্বিনকে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে শুরু, শামিকে সোজা আরেক ড্রাইভে দেখান আত্মবিশ্বাস। কিন্তু লিটনের শুরুটা যতটা আশা জাগানিয়া, সেই আশা ফুটোও হয়ে যায় দুম করে। চা-বিরতির পর টেল এন্ডারদের নিয়ে যখন তার কাছে লড়াইয়ের দাবি দলের, তখন বিলাসী এক ড্রাইভ খেলার নেশা উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানায় তাকে।
আরও একটি টেস্ট প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতায় অনেকটা খুইয়ে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অভাবনীয় কিছু না হলে সেই একই গল্পের পুনারাবৃত্তি হওয়ার আভাসও জোরালো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ১৫০ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৩৭, মিঠুন ১৩, মুশফিক ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১০, লিটন ২১, মিরাজ ০, তাইজুল ১, আবু জায়েদ ৭*, ইবাদত ২; ইশান্ত ২/২০, উমেশ ২/৪৭, শামি ৩/২৭, অশ্বিন ২/৪৩, জাদেজা ০/১০)।
Comments