প্রথম দিনেই চালকের আসনে ভারত
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর বোলিংয়ের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু ম্যাচের লাগাম হাতছাড়া করেনি ভারত। তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশ দ্রুত রোহিত শর্মাকে ফেরাতে পারলেও আর কোনো উইকেট আদায় করে নিতে পারেনি। দিনের শেষ ওভারগুলোতে নিরাপদেই আবু জায়েদ রাহি-ইবাদত হোসেন-তাইজুল ইসলামদের মোকাবিলা করেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও চেতেশ্বর পূজারা। ফলে ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে প্রথম দিনেই চালকের আসনে বসেছে বিরাট কোহলির দল।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র ৬৪ রানে পিছিয়ে আছে ভারত, তাদের হাতে রয়েছে ৯ উইকেট। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেকে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে থেমেছে মাত্র ১৫০ রানে।
ভারতের ইনিংসের অষ্টম ওভারেই সাফল্য পায় অভিষিক্ত অধিনায়ক মুমিনুল হকের দল। আবু জায়েদের শিকার হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ওপেনার রোহিত। মায়াঙ্কের সঙ্গে সাবধানী শুরু করা এই ব্যাটসম্যান অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন দাসের হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের সিরিজেই রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন রোহিত। এক টেস্টে করেছিলেন জোড়া সেঞ্চুরি। আরেক টেস্টে হাঁকিয়েছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। তবে এবার ফেরেন দ্রুতই। ১ চারে ১৪ বলে ৬ রান করেন তিনি।
ভারতের দলীয় ১৪ রানের মাথায় উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ শুরুটা দারুণ করেছিল বটে, তবে সেটা উবে যেতে সময় লাগেনি। রোহিতকে হারানোর ধাক্কা সামলে পূজারাকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা পার করে দেন মায়াঙ্ক। তিনি অপরাজিত আছেন ৮১ বলে ৩৭ রানে। পূজারা আগামীকাল নামবেন ৬১ বলে ৪৩ রানে থেকে। তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটির সংগ্রহ ৭২ রান।
শেষ বিকালে উইকেট তুলে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ অবশ্য তৈরি করেছিলেন আবু জায়েদ। কিন্তু একমাত্র স্লিপে ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি ইমরুল কায়েস। ব্যক্তিগত ৩২ রানে বেঁচে যান মায়াঙ্ক। ফলে নির্বিঘ্নে দিনের খেলা শেষ করে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত প্রথম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৮৬/১ (মায়াঙ্ক ৩৭*, রোহিত ৬, পূজারা ৪৩*; ইবাদত ০/৩২, রাহি ১/২১, তাইজুল ০/৩৩)।
বাংলাদেশকে ১৫০ রানে গুঁড়িয়ে দিল ভারত
এর আগে চা বিরতির পর বাংলাদেশের ইনিংস টেকে মাত্র ৪.৩ ওভার। বাংলাদেশ যোগ করতে পারে মোটে ১০ রান, হারায় হাতে থাকা বাকি ৩ উইকেট। ভারতের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ করে মুমিনুল হকের দল প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫০ রানে।
হল্কার স্টেডিয়ামে ভারতীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম অভিযানে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দেড়শো ছুঁয়ে পাততাড়ি গোটায় রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। বাংলাদেশের শেষ ৫ উইকেটের পতন হয় মাত্র ১০ রানে।
প্রথম সেশনে ভারতের তিন পেসারের চোখ রাঙানির মধ্যে বাংলাদেশ তুলেছিল ৩ উইকেটে ৬৩ রান। অধিনায়ক মুমিনুল ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে চড়ে দ্বিতীয় সেশনের শুরুটা হয়েছিল বেশ ভালো। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে তাদের ৬৮ রানের জুটি শেষ হতেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং। ফলে এই সেশনে বাংলাদেশ তুলতে পারে ৭৭ রান, হারায় ৪ উইকেট। ইনিংসের শেষ ৩ উইকেটের পতন হয় তৃতীয় সেশনে।
ভারতীয় ফিল্ডাররা ক্যাচ মিসের মহড়া দেন এদিন। আজিঙ্কা রাহানে একাই ছাড়েন তিনটি ক্যাচ। তারপরও সুবিধা আদায় করে নিতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। মুমিনুল একবার জীবন পেয়ে ৮০ বলে ৩৭ রান করেন। মুশফিক তিনবার বেঁচে গিয়েও হাফসেঞ্চুরি তুলে নিতে পারেননি। আউট হন ১০৫ বলে ৪৩ রান করে। সাতে নেমে লিটন দাস করেন ৩১ বলে ২১ রান। তাদের বাইরে দুই অঙ্কে পৌঁছান কেবল মোহাম্মদ মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ।
ভারতের হয়ে ২৭ রানে ৩ উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি। ২টি করে উইকেট পান ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাইজুল ইসলাম হন রানআউট। অফ স্পিনার অশ্বিন অবশ্য নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। তার বলে চারটি ক্যাচ হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে রাহানে-ঋদ্ধিমান সাহাদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ১৫০ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৩৭, মিঠুন ১৩, মুশফিক ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১০, লিটন ২১, মিরাজ ০, তাইজুল ১, আবু জায়েদ ৭*, ইবাদত ২; ইশান্ত ২/২০, উমেশ ২/৪৭, শামি ৩/২৭, অশ্বিন ২/৪৩, জাদেজা ০/১০)।
Comments