পেঁয়াজের দামে রেকর্ড সৃষ্টির নেপথ্যে

onion crisis
১৪ নভেম্বর ২০১৯, রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত টিসিবি থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে মরিয়া ক্রেতারা। কেননা, খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম গিয়ে ঠেকেছে কেজি প্রতি ২২০ টাকায়। ছবি: এমরান হোসেন

দেশে পেঁয়াজের বাজার এতোটাই অস্থির যে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ২২০ টাকায় পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এমনকী, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিকারীদের বন্দুকযুদ্ধে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন একজন সংসদ সদস্য। কিন্তু, কী কারণে পেঁয়াজের বাজারে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে।

আজ (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর জাফরাবাদ এলাকায় খোঁজ নিলে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ২৩০-২৪০ টাকা চায় দুটি দোকানে, যা গতকাল বিকালের চেয়ে বেশি।

দেশের অন্যতম শীর্ষ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা রাজবাড়ির একজন আড়তদার গোবিন্দ সাহার ভাষ্য: কৃষকের কাছে এখন পেঁয়াজ খুব একটা নেই।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, আজ সকালে তার এলাকায় পেঁয়াজের দাম উঠেছে মণপ্রতি ৯,০০০ টাকা থেকে ৯,৫০০ টাকার মতো। তার এলাকার আশেপাশের মোকামগুলোতে মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ মণ পেঁয়াজ ওঠে। “কিন্তু, কৃষকের হাতে এখন আর পেঁয়াজ তেমন একটা নেই। কারণ, এটি পেঁয়াজের মৌসুম না।” এ কারণে এখন তার এলাকার মোকামগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ দৈনিক ১,০০০ মণে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।

“মাঠ পর্যায়ের খবর” হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নভেম্বরের শেষের দিকে ‘মুড়ি কাটা’ নামের নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠে। কিন্তু, সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। অনেক কৃষক নতুন করে পেঁয়াজ বুনেছেন। তবে তা উঠতে ডিসেম্বর লেগে যেতে পারে।”

আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ঢাকার শ্যামবাজারের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজ ডেইলি স্টারকে বলেন, “ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে তা সবাই জানি। কিন্তু, সেই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কতো দিন চলবে জন্যে তা কেউ জানি না।”

“এ কারণে পেঁয়াজ আমদানিকারকদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। তারা যদি অন্যদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন আর তখন যদি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি আবার শুরু করে দেয় তাহলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে। বাংলাদেশের ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে পেলে চীন, তুরস্ক বা মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেনেন না,” যোগ করেন তিনি।

তার মতে, পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার আরও একটি কারণ হচ্ছে- বড় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানির খবর শুনে ছোট ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। কারণ, বড় ব্যবসায়ীদের আমদানির পরিমাণ বেশি হবে, তাই তাদের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় টিকতে পারবে না এমন আশঙ্কা করছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অনেকেই পেঁয়াজ আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না।

ফলে এখানেও পেঁয়াজ আমদানি করার বিষয়ে একটি নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এছাড়াও জরিমানা ও হয়রানীর ভয়েও অনেক ব্যবসায়ী হাত-পা গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের আবহাওয়ায় পেঁয়াজের মূল মৌসুম হচ্ছে এপ্রিল-মে। এগুলো ‘হালি পেঁয়াজ’ নামে পরিচিত। এগুলো দেশের বাজারে সাধারণত নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়।

চলতি বছর বৃষ্টি-বাদলের কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। একারণে দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে গেছে, বলছেন ব্যাবসায়ীরা।

আর ‘হালি পেঁয়াজের’ মজুদ শেষ হতে হতে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ধীরে ধীরে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে থাকে। এগুলোকে ‘মুড়ি কাটা’ পেয়াজ বলে। সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে এগুলোর আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই `মুড়িকাটা পেঁয়াজ’ বাজারে আসতে দেরি হবে।

শামবাজারের আড়তদার নারায়ণ সাহা জানান, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ‘মুড়ি কাটা’র সরবরাহ বাড়লে বাজারের অস্থিরতা কমতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago