খেলা

এই অ্যাপ্রোচ, এই মানসিকতায় এমনই তো হওয়ার কথা ছিল

‘পেসারদের তো একাদশে জায়গাটা অর্জন করে নিতে হবে’- আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেসারবিহীন একাদশ নামিয়ে দেওয়ার পর প্রশ্নের মুখে এমনটাই বলছিলেন তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অতি স্পিন উইকেট বানিয়ে পেসার ছাড়া নেমে উপমহাদেশের দল আফগানিস্তানের সঙ্গে সেবার ধরা খেয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর টেস্টে স্পোর্টিং উইকেটে আবু জায়েদ রাহি যখন বিরাট কোহলিদের কাবু করছিলেন এবং পরে সঙ্গ দেওয়ার কাউকে পাচ্ছিলেন না, মনে এলো সাকিবের সে কথা।
india and bangladesh
ছবি: বিসিসিআই টুইটার

‘পেসারদের তো একাদশে জায়গাটা অর্জন করে নিতে হবে’- আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেসারবিহীন একাদশ নামিয়ে দেওয়ার পর প্রশ্নের মুখে এমনটাই বলছিলেন তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অতি স্পিন উইকেট বানিয়ে পেসার ছাড়া নেমে উপমহাদেশের দল আফগানিস্তানের সঙ্গে সেবার ধরা খেয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর টেস্টে স্পোর্টিং উইকেটে আবু জায়েদ রাহি যখন বিরাট কোহলিদের কাবু করছিলেন এবং পরে সঙ্গ দেওয়ার কাউকে পাচ্ছিলেন না, মনে এলো সাকিবের সে কথা।

উইকেটে যদি পেসারদের জন্য থাকে কিছু রসদ, তাহলেও বাংলাদেশের পেসাররা একেবারেই কার্যকর নন- এমন কথা চালু আছে দেশের ক্রিকেটে। কিন্তু এই কথার সত্যিই বাস্তব ভিত্তি আছে, নাকি তা কেবলই একটা ধারণা? যা-ই হোক, এমন চিন্তার জায়গা থেকেই যে পেসারদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে, যথেষ্ট তৈরি করা হয়নি, বিশ্বাসের জায়গায় আনা হয়নি, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

দেশের বাইরে স্পোর্টিং উইকেটে স্পিনাররা যেখানে নখদন্তহীন, সেখানে তাই পেস সংকটের হাহাকার চড়া হবে। হয়েছে তাই ইন্দোরে।

ইন্দোরের হল্কার স্টেডিয়ামের উইকেট দাবি করছিল অন্তত তিন পেসারের। বাংলাদেশ নিল মাত্র দুজন। একজন পেসার কমিয়ে যে একজন স্পিনার নিল, তাও নয়। নিল আরেকজন বাড়তি ব্যাটসম্যান। অর্থাৎ শুরুতেই একটা নেতিবাচক অ্যাপ্রোচে ঢুকে গেছে দল। যে দুই পেসার খেললেন, তাদের মধ্যে রাহি তো শুরু থেকেই ভীষণ কার্যকর, নিয়েছেন ৪ উইকেট। জায়গায় বল ফেলেছেন, আদায় করেছেন স্যুয়িং। ব্যাটসম্যানের মতিগতি পড়ে বল ভেতরে ঢুকিয়েছেন, ড্রাইভে প্রলুব্ধ করেছেন। তার বোলিংয়ে ছিল পরিকল্পনার ছাপ। 

ইবাদত হোসেন উইকেট কেবল একটা পেলেও একটা পর্যায় পর্যন্ত চাপটা রাখতে পারছিলেন। কিন্তু তারা তো আর সারাক্ষণ বল করতে পারেন না, তারা সরতে আলগা হয়েছে বাঁধন। ভারতের ব্যাটসম্যানরা পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস। পরে তাদেরও আর করার ছিল সামান্যই।

আগের দিন অধিনায়ক মুমিনুল হক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানো ছাড়া অন্য ভাবনার জায়গা তারা মাথাতেই নেননি। অর্থাৎ পেসারদের নিয়ে বিশ্বাসের জায়গা দুর্বল। কিন্তু সেই বিশ্বাস দুর্বল হওয়ার পেছনে যতটা দায়ী করা হয় পেসারদের, ততটাই কি দায়ী হওয়ার কথা তাদের?

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে অভিষেক হয়েছিল সৈয়দ খালেদ আহমেদের। অভিষেকেই দারুণ বল করেছিলেন। কিন্তু উইকেট পাননি। কীভাবে পাবেন! ওই ইনিংসেই যে তার বলে পড়েছিল অন্তত চারটি ক্যাচ। এরপরে আরও দুই টেস্ট খেলেছেন, উইকেট পাননি। দুর্ভাগা খালেদের বলে ক্যাচ পড়েছে আরও। তিন টেস্ট খেলেও তার তাই উইকেট নেই। এজন্য কি শুধু তিনিই দায়ী?

এই টেস্টের কথাই ধরুন। আবু জায়েদের বলে প্রথম দিন বিকালে ৩২ রানে ক্যাচ পড়ল মায়াঙ্ক আগারওয়ালের, দ্বিতীয় দিনে ৪৩ রানে জীবন চেতশ্বর পূজারার। পূজারা খানিক পরে ফিরলেও সেই আগারওয়াল থেমেছেন একেবারে ২৪৩ রান করে, বাংলাদেশকে একেবারেই সব সম্ভাবনা থেকে ছিটকে দিয়ে।

বলতে পারেন, ক্যাচ মিস তো খেলারই অংশ, সব দলেরই হাত ফসকে বেরোয় ক্যাচ। কিন্তু কতটা? কতটা নিয়মিতভাবে হয় এমন? বাংলাদেশের প্রতি টেস্টেই গোটা চার-পাঁচ ক্যাচ হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। কখনো সেই সংখ্যা হয় আরও বেশি। কেবলই কি এসব ভুল খেলার অংশ করে চালিয়ে দেওয়ার উপায় আছে?

বাংলাদেশের পেসাররা আসলে ভারতের পেসারদের কাছাকাছি মানেরও নন। খুবই সত্যি কথা। কিন্তু তারা বাংলাদেশের একাদশে জায়গারই যোগ্য নন বলে খোদ টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে যেসব কথা বেরোয়, তা কতটা ঠিক?

সুবিধামত উইকেট পেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের যদি রাহি বিপাকে ফেলতে পারেন, সহায়ক উইকেট পেলে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তো তার আরও দুর্দান্ত কিছু করবার কথা। ইন্দোরের মতো স্পোর্টিং উইকেট বানালে আফগানদের সঙ্গে কি দাপট দেখাতে পারত না বাংলাদেশ? আফগানদের স্পিনই আসল শক্তি। তাদের বিপক্ষে দেওয়া হলো ঘুর্ণি বলের পিচ। সেখানে নিজেদের স্পিন দিয়ে ওদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠা গেল না।

ইন্দোর টেস্টের ফল এখনো হয়নি। কিন্তু শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিন শেষেই অলিখিতভাবে ফল আসলে লেখা হয়ে গেছে। বাংলাদেশও জানে এই টেস্ট থেকে তাদের আর কি পাওয়ার আছে! এই পরিস্থিতি কেন হলো? খেলার মাঠে নেমেই হয়েছে, কেবলই প্রয়োগের ভুলে? নাকি মাঠে নামার আগে যে নেতিবাচক, বদ্ধমূল ভুল ধারণা আছে তার জন্য হয়েছে এমনটা? বাংলাদেশ ধরেই নিয়েছে উইকেট যেমনই হোক সর্বোচ্চ দুই পেসারের বেশি খেলানো যাবে না। বরং ব্যাটসম্যান রাখতে হবে বেশি। তার কারণ ইনিংস বড় করে তারা যদি খেলাটা লম্বা করতে পারেন। মাঠে নামার আগেই আপনি দেখাচ্ছেন আপনার ইতিবাচক কিছু করার তাড়না বা সামর্থ্য নাই। আপনি থাকবেন রক্ষণে, সম্মানজনক একটা ফল চাইবেন। মনস্তাত্ত্বিক লড়াইতে এখানেই তো সব চুকেবুকে গেল।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং পারেন এমন দশজন ছিলেন একাদশে। তাতে কি হয়েছে? বাংলাদেশ তো কোনো ইনিংসে আড়াইশও করতে পারেনি। এবারও তাই, সাত বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান আর এক অলরাউন্ডার নিয়ে দুই সেশনে দেড়শোর বেশি করা যায়নি। প্রমাণ হয়েছে, আপনি যদি না পারেন, তবে এগারোজন ব্যাটসম্যান নিয়ে নেমেও টিকতে পারবেন না।

ইন্দোরে সেটাই হয়েছে। বাংলাদেশের ভুল মানসিকতা, প্রশ্নবিদ্ধ কৌশল খেলার আগেই খেলা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে তাদের। প্রথম দিন দুই সেশনে দেড়শ রানে অলআউট হওয়া। এরপর এক পেসারের তোপ সামলে ভারত করে ফেলেছে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান। এগিয়ে আছে ৩৪৩ রানে। এসবই হওয়ার কথা ছিল।

অনেকে বলতে পারেন, তিন পেসার খেলালেও তো এমনই হতে পারত। হতেই পারত। কিন্তু তখন প্রক্রিয়াটা থাকত ঠিক, মানসিকতাটা থাকত ইতিবাচক। ঠিক প্রক্রিয়া, ঠিক মানসিকতায় থাকলে এক সময় ফল আসবেই। কিন্তু কেউ যদি ঠিক পথেই না থাকে, তাহলে লক্ষ্যে কোনোদিনও পৌঁছানো সম্ভব না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(দ্বিতীয় দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ১৫০ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৩৭, মিঠুন ১৩, মুশফিক ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১০, লিটন ২১, মিরাজ ০, তাইজুল ১, আবু জায়েদ ৭*, ইবাদত ২; ইশান্ত ২/২০, উমেশ  ২/৪৭, শামি ৩/২৭, অশ্বিন ২/৪৩, জাদেজা ০/১০)

ভারত প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ৮৬/১) ১১৪ ওভারে ৪৯৩/৬ (মায়াঙ্ক ২৪৩, রোহিত ৬, পূজারা ৫৪, রাহানে ৮৬, জাদেজা ৬০*, ঋদ্ধিমান ১২, উমেশ ২৫*; ইবাদত ১/১১৫, আবু জায়েদ ৪/১০৮, তাইজুল ০/১২০, মিরাজ ১/১২৫, মাহমুদউল্লাহ ০/২৪)।

ভারত ৩৪৩ রানে এগিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English
Sheikh Hasina's Sylhet rally on December 20

Hasina likely to kick off AL campaign with Sylhet rally on Dec 20: Quader

Prime Minister Sheikh Hasina, also the president of the ruling Awami League, will formally kick off the election campaign of the ruling party from a rally in Sylhet likely to be held on December 20.

2h ago