বিমানে উড়িয়ে পেঁয়াজ আনছে সরকার

দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করছে।
onion-child.jpg
রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে ছোট্ট এ শিশুকেও। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করছে।

আজ (১৫ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সমুদ্র পথে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে, যা অতিশীঘ্রই বড় পেঁয়াজের চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।

এছাড়াও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহনে কয়েকদিনের জন্য সমস্যা হয়েছিলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হতে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে এবং মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। কেউ পেঁয়াজ অবৈধ মজুত করলে, কারসাজি করে অতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করলে বা অন্য কোনো উপায়ে বাজারে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে।  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার অভিযান জোরদার করেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে।

দাম কম ও সহজ পরিবহনের কারণে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মায়ানমার থেকে এলসি এবং বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। পাশাপাশি মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা হয়। সম্প্রতি মায়ানমারও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেকবার সভা করেছে, নিয়মিতভাবে আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বৃদ্ধি এবং নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিদিনই অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাস করার হয়েছে।  স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ  দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সে মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে।

দেশে পেঁয়াজের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি জোরদার করা হয়েছে, ৩৫টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্রয় চলছে। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ ক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সেখানে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পেঁয়াজ দ্রুত পরিবহন নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘ্ন করতে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৪টি টিম প্রতিদিন ঢাকা শহরের বাজারগুলো মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও প্রতিটি জেলা প্রশাসন জেলার বাজারগুলোতে মনিটরিং জোরদার করেছে। ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো বড় পাইকারি বাজারগুলোতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যায়, খুব কম সময়ের মধ্যেই পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক হবে।

Comments