সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট
নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামা, পরিবহনসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
আমাদের চট্টগ্রাম সংবাদদাতা জানান, আজ (২০ নভেম্বর) ভোর থেকে শ্রমিকেরা এই কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের গেট সার্জেন্ট (চার নম্বর গেট) নাসির উদ্দিন জানান, অন্য সব দিনে বন্দরের গেটে যানবাহনের বেশ দীর্ঘ লাইন থাকলেও, আজ ভোর থেকে সেখানে তেমন কিছুই চোখে পড়েনি।
বন্দরের ১৭টি বেসরকারি ডিপোতেও পণ্য ওঠানামা ও পরিবহনের কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহন বন্ধ
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী সকল গণপরিবহন সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা।
আমাদের নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় এলোপাতাড়ি যানবাহন রেখে অবরোধ করে রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকেরা জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত রাখাসহ নয় দফা দাবিতে আজ সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ওই কর্মবিরতিতে সংহতি প্রকাশ করে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও সকল ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ছয়টা থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা ফতুল্লা থানাধীন সাইনবোর্ড এলাকায় দাবি আদায়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় এলোপাতাড়ি যানবাহন ফেলে রেখে ঢাকামুখী রাস্তা বন্ধ করে দেন। এতে শিবু মার্কেট থেকে এ সড়কের চার কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নারায়ণগঞ্জমুখী সড়ক ফাঁকা থাকলেও যানবাহন নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ
পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এ রুটে চলাচলকারী শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন।
তবে ফেরি, লঞ্চ ও স্পীডবোট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু ঘাটে যান না থাকায় ফেরিগুলোকে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, আজ সকালের দিকে শিমুলিয়া ঘাট হতে বাস চলাচল শুরু হলেও, নয়টার পর শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে তা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা থেকে যে সকল বাস সকালে ছেড়ে এসেছে, সেগুলো আর ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে না। চালক-শ্রমিকরা বাস পার্কিং করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন এ রুটের যাত্রীরা।
মাওয়া বাস মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলী আকবর হাওলাদার বলেন, “আমরা মালিক পক্ষ বাস চলাচল বন্ধ করিনি। কিন্তু শ্রমিক-চালকরা নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবীতে সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে আমরা চেষ্টায় আছি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বাস চলাচল চালু করার।”
মাওয়া ট্রাফিক জোনের টিআই মো. হিলাল উদ্দিন জানান, শ্রমিকরা সকাল নয়টার পর হতে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে দু’একটি বাস ছেড়ে যাচ্ছে।
খুলনায় সকাল থেকে বাস চলার কথা থাকলেও চলছে না
খুলনার অভ্যন্তরীণ রুটে আজ সকাল থেকে বাস চলাচলের কথা থাকলেও চলছে না।
নতুন সড়ক আইন সংশোধন না করার প্রতিবাদে খুলনায় তৃতীয় দিনের মতো চলছিলো চালকদের কর্মবিরতি।
সকালে বাস ছাড়বে এমন খবরে সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রয়্যাল ও শিববাড়ির মোড়ে শত শত যাত্রীরা দূর-দূরান্তে যাত্রার উদ্দেশ্যে আসলেও, বাস না ছাড়ায় তাদের যাত্রা ভঙ্গ হচ্ছে। অধিকাংশ বাস কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।
পরিবহণ ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে গতকাল দুপরে পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত ভেস্তে যায়।
পরে খুলনা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই পক্ষের আলোচনা শেষে মধ্যস্থতার প্রেক্ষিতে পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতারা চলমান পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন।
পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে বাস ছাড়ার সিদ্ধান্তের পরও কেনো বাস চলছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “চালকরা কেউ গাড়ি চালাতে চাচ্ছে না। ভোর সাড়ে ছয়টায় সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসে চালকদের গাড়ি চালাতে অনুরোধ করলেও, তারা তাতে রাজি হচ্ছেন না। চালকরা বলছেন, দুর্ঘটনা ঘটলে সব জরিমানা আপনি দিবেন, এমন লিখিত দিলে আমরা গাড়ি চালাবো।”
Comments