ভারত এত তাড়াতাড়ি জিতুক, চাননি ইডেনের দর্শকরা

সকাল ১১টাতেই স্টেডিয়ামের বাইরে হাজির অরিন্দম দাস। অনেক কষ্টে তৃতীয় দিনের টিকেট কেটে রেখেছিলেন। পরিবারসমেত গোলাপি বলের দিবা-রাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের স্বাক্ষী হবেন, এই ছিল ইচ্ছা। আগের দিন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ৪ উইকেট পড়াতে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তার। খেলা যদি তিন দিনে না যায়, তার সব পরিকল্পনাই যে মাটি! তৃতীয় দিনে খেলা হলো বটে, তবে অরিন্দমদের মতো অনেকের পয়সা আসলে কতটা উসুল হলো এদিন!
রবিবার (২৪ নভেম্বর) কলকাতা টেস্টের তৃতীয় দিনে এক ঘন্টা খেলা হওয়ারও নিশ্চয়তা ছিল না, তবু ইডেন গার্ডেন্সের গ্যালারি এমন অনেক ক্রিকেট ভক্তের কারণে হয়ে উঠে ভরপুর। একে তো ছুটির দিন, তার মধ্যে গোলাপি বলের টেস্টের স্বাক্ষী হওয়া চাই। টিকেট নিয়েও যারা মাঠে আসতে দেরি করেছেন, তারা আক্ষেপই করবেন। খেলা তো শেষ হয়েছে ৪৬ মিনিটেই!
ভারত জিতবে- সবাই জানত। ভারত জিতুক- দিন শেষে এটাও তাদের চাওয়া। তবে এত দ্রুত খেলা শেষ হয়ে যাক, চাননি কেউই। তৃতীয় দিনের সকাল থেকেই তাই বাংলাদেশের প্রতি রানের সঙ্গে এলো করতালি। মুশফিকুর রহিমের বাউন্ডারির সঙ্গে চলল উল্লাস-ধ্বনি।
কিন্তু মুশফিক একা আর কত। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ব্যাট করতে না নামায় বাংলাদেশের ৯ উইকেট পড়তে শেষ হয়ে যায় ম্যাচ।
বাবার সঙ্গে চন্দননগর থেকে খেলা দেখতে এসেছিল অষ্ঠম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রিয়ম রায়। তার কথা, ‘মাত্রই এলাম, তার মধ্যে খেলা শেষ। আরেকটু খেলা হলে খুব ভালো হত। আজকে চেয়েছিলাম, বাংলাদেশ আরও কিছু রান করুক। খেলাটা একটু লম্বা হোক।’
একই কথা তার বাবারও, ‘বাংলাদেশ আরেকটু লড়াই করলে ভালো হতো।’
কলকাতার সাংবাদিক সন্দিপন ব্যানার্জি বাড়ির লোকদের জন্য তৃতীয় দিনের টিকেট কেটে চিন্তায় ছিলেন দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে। পরে মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধে খেলা তৃতীয় দিনে গড়ালে স্বস্তি ফুটে উঠেছিল তার মুখে।
ঐতিহাসিক গোলাপি বলের টেস্ট ঘিরে ইডেনে প্রথম চার দিনের সব টিকেট বিক্রির খবর দিয়েছিলেন বিসিসিআই প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলি। খেলা তৃতীয় দিনের প্রথম ঘন্টাতেই শেষ। চতুর্থ দিনের টিকেট যারা কিনেছেন তাদের কি হবে? কলকাতা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (সিএবি) একজন কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেও এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল না।
উৎসবমুখর নানান আয়োজনের শেষ হয়েছে ইডেনে। বাংলাদেশ দলই এই আয়োজনে যেন কেমন বেমানান। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৬ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পেরেছে ১৯৫ রান। দুই ইনিংস মিলিয়েও ভারতের ৩৪৭ রান ডিঙানো যায়নি।
নিজেদের দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করেছেন, গতির ঝড় তুলে ইশান্ত শর্মা-উমেশ যাদবরা ৫ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু এখানকার দর্শকরা চেয়েছিলেন আরও বেশি কিছু!
Comments