আনন্দবাজার পত্রিকার বিশ্লেষণ

মিত্র হাসিনার শীতল অভ্যর্থনা, কাঠগড়ায় দিল্লি

২২ নভেম্বর ২০১৯, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে ঘণ্টা বাজিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচের শুভ সূচনা করেন। ছবি: পিআইডি

অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান যখন নয়াদিল্লিতে নামে, তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রথম বারের সাংসদ তথা নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। হাসিনার সফরসঙ্গী নেতারা ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছিলেন, এটা ‘যেচে অপমান নেওয়া’। প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বা কোনও সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন- এটাই ছিল প্রত্যাশা। প্রথম বার জিতে আসা কোনও প্রতিমন্ত্রী নন।

গত কাল প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কলকাতায় এলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। কিন্তু তাঁকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষ আমলাকেও পাঠানো হয়নি। যা কি না বাঁধাধরা কূটনৈতিক প্রথা এবং সৌজন্যের বিরোধী। কেন এমন উদাসীনতা প্রদর্শন, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাইছে না সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই কারণ। এক দিকে তাঁরা যখন দেশজুড়ে এনআরসি করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করার কথা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত এনআরসি-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতেই চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। কিন্তু সিনিয়র কোনও আমলাকেও কেন কলকাতায় পাঠায়নি মোদী সরকার, তা নিয়ে চুপ সাউথ ব্লকের কর্তারা। সব মিলিয়ে দিল্লির এই আচরণে প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের অস্বস্তি যে আরও বেড়ে গেল, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ মোদী। পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে আসা জঙ্গিপনায় ভারত যখন চাপে, সেই সময় হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস উৎখাত করবেন। সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকাকেই বিভিন্ন চড়াই উতরাইয়ে পাশে পেয়েছে দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের অনুরোধে ঢাকা তাদের দেশের ভিতর দিয়ে অসম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকায়। এমন ‘পরম মিত্রের’ ভারত সফরে দিল্লির এই উদাসীনতা কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রা কাড়তে না চাইলেও দিল্লির এই উদাসীনতা যে ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার পক্ষে চাপের, সে কথা ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে। এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুমকির ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়ছে। দিল্লির আচরণ তাকে উস্কে দিতে পারে।

চিনপন্থী গোতাবায়া রাজাপক্ষ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পরে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চিনের কাছে ঋণের ফাঁসে কার্যত বন্দি কলম্বো তাদের হাম্বানটোটা বন্দরটি তুলে দিয়েছে বেজিংয়ের হাতে। ভারতের জন্য কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারত-বিরোধী ঘাঁটি তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বেজিং। এ বার গোতাবায়ার জমানায় সেই কাজ মসৃণ হওয়ার সম্ভাবনা।

ডোকলাম পরবর্তী ভুটান এবং চিনপন্থী সরকার হওয়ার পরে নেপালও খোলাখুলি ভাবেই বেজিংয়ের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় পর্যটকদের জন্য মোটা পর্যটন শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান। অন্য দিকে চিনের উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ায় নয়াদিল্লির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে নেপালের। ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত যৌথ সেনা মহড়া থেকে কাঠমান্ডুর সরে দাঁড়ানো, চিনের সঙ্গে পণ্য পরিবহণ চুক্তি করা, বেজিংয়ের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এ নিজেদের সামিল করার মতো বিষয়গুলি থেকে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দিল্লির এমন শীতল ব্যবহারে অবাক অনেকেই।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

Comments

The Daily Star  | English

Iran launches waves of missiles at Israel in response to airstrikes

"In the last hour, dozens of missiles have been launched at the state of Israel from Iran, some of which were intercepted," the Israeli military said.

11m ago