ডান্স বারে কাজের কথা বলে নারী পাচার, আটক ৬

নারায়ণগঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ছয় জন সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। উদ্ধার হয়েছে চার তরুণী ও বিপুল সংখ্যক পাসপোর্ট ও বিমান টিকেট।
দুবাইয়ে ডান্স বারের নাচের কথা বলে নারী পাচারকারী দলের ৬ সদস্যকে আটক করেছে র‍্যাব। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ছয় জন সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। উদ্ধার হয়েছে চার তরুণী ও বিপুল সংখ্যক পাসপোর্ট ও বিমান টিকেট।

র‌্যাব জানায়, তাদের তথ্য অনুযায়ী এক বছরে ৭২৯ তরুণীকে পাচার করা হয়েছে। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের দুই শতাধিক। ভুক্তভোগী তরুণীরা বলেছেন, ভালো বেতন ও সুযোগ সুবিধায় শুধু ‘মডার্ন ড্যান্সের’ কথা বলে নিয়ে যৌন নির্যাতন করা হতো তাদের।

রোববার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকার র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল হক।

তিনি জানান, এ মানব পাচারকারী চক্রের ওপর দীর্ঘদিন যাবৎ র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় ২৩ নভেম্বর শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো মোড়ের শাহ চন্দপুরী রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৭০টি পাসপোর্ট, নগদ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমান টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর ও একটি বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। এসময় তাদের হাত থেকে চার জন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতরা হলেন মো. অনিক হোসেন (৩১), মো. আক্তার হোসেন (৪০), পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী দালাল মো. আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (৩৭), দুবাইয়ের ডান্স ক্লাবের মালিক মো. মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০) আ. হান্নান (৫২) ও মবিন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মো. আকাশ (২৯)।

মো. রেজাউল হক জানান, জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণীদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে থাকে। এই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ডান্স বারের মালিক, ট্রাভেল এজেন্সি ও অসাধু ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে। এই নারী পাচারকারী চক্রের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবারের, পোশাক শিল্পের, অভিভাবকহীন তরুণীদের টার্গেট করে থাকে।

নারী পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা নগদ অর্থ, পাসপোর্ট ও মালামাল। ছবি: স্টার

সংবাদ সম্মেলন শেষে উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগী এক নারী জানান, অভাব অনটনে সংসার চলাতে বাবা মায়ের কষ্ট হচ্ছিল। তখনই গ্রামের এক বোন বলে বিদেশ যাওয়ার জন্য। এর পরই এজেন্ট মো. অনিক হোসেন যোগাযোগ করতে শুরু করে। বলে বিদেশ যেতে কোন টাকা লাগবে না, পাসপোর্ট সহ যাবতীয় খরচ তারাই বহন করবে। আর সেখানে গিয়ে ডান্স বারের শুধু ‘মডার্ন ডান্স’ হবে এটাই কাজ। বিনিময়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন, মোবাইল, স্বর্ণের চেইন সহ বিভিন্ন উপহারও পাওয়া যায়। এসব কিছু শুনে রাজি হই। এরপর তারা আমাদের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকাও দেয় পোশাকসহ বিভিন্ন কেনাকাটার জন্য। আর আমাদের ছবি তুলে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমি কোথাও নাচ শিখিনি। তারা বলে সেখানে শিখিয়ে দিবে। পরে একটা হোটেলে ডান্স বারের মালিকের সঙ্গে দেখা করায়। এর কিছুদিন পর বিদেশে নিয়ে যায়। বিদেশে যাওয়ার পর সেখানে পুরো উল্টো চিত্র। এয়ারপোর্ট থেকে একটি গাড়িতে করে নিয়ে একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখে। প্রথম ১০দিন ডান্স বারে নিয়ে যায় সেখানে ডান্স করায়। কিন্তু এরপর থেকে অসামাজিক কাজ করতে বলে। রাজি না হলে গালাগালি করে, মারধর করে, খাবার দেয় না, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এরপরও রাজি না হলে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে পাঠায়। সব মেয়েকেই নেশা করিয়ে খদ্দরের কাছে পাঠায়।

ভুক্তভোগী অন্য নারীরা বলেন, বাংলাদেশি অনেক মেয়ে দুবাইয়ে আছে। তাদের অনেকে অসুস্থ হয়ে গেছে। কেউ গর্ভবতী হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের কোন চিকিৎসা দেওয়া হয় না। তাদের দেশেও পাঠায় না। এনিয়ে এজেন্টদের কাছে বলতে গেলে উল্টো গালাগালি করে। তারা বলে, কোম্পানি টাকা দিয়ে নিয়েছে। তারা যা বলবে তাই করতে হবে। এজন্য অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হতো না। এছাড়া এজেন্টরা যখন মনে করে তাকে দিয়ে কাজ হবে না তখন তারাই দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু দেশে ফিরে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায় না তাই আইনের কাছে যাওয়া হয়না। এছাড়া মান সম্মানের ভয়েও যাওয়া হয় না।

অভিযানের নেতৃত্বে দেওয়া র‌্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আলেপ উদ্দিন বলেন, তরুণীদের প্রাইভেট সার্ভিস দেখিয়ে টুরিস্ট ভিসায় নেওয়া হতো। আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হলে সিন্ডিকেটই আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। পরবর্তীতে তারা আবারও তাদের প্রলোভন দেওয়া শুরু করে এবার এমন হবে না। শুধু ডান্স করবে। এতে রাজি না হলে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। পরে এ তরুণীরাও এক পর্যায়ে দ্বিতীয় বার যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এ চক্রে দেশে-বিদেশে ৫০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। এরা বিগত এক বছরের ৭২৯ জন তরুণীকে বিদেশে পাঠিয়েছে। যার মধ্যে শুধু মাত্র নারায়ণগঞ্জ থেকেই দুই শতাধিক তরুণী রয়েছে। এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now