বিপিএলে খাবার খেয়ে ১৭ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন অসুস্থ
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সরবরাহকৃত দুপুরের খাবার ও সন্ধ্যার নাস্তা খেয়ে ১৭ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বমি, পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হওয়াসহ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান একাধিক সাংবাদিক। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিসিবির মিডিয়া বিভাগে কর্মরত কয়েকজন কর্মীও। একসঙ্গে এত জনের অসুস্থ হয়ে পড়ার পর খাবার সরবরাহকারী রেস্টুরেন্টের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে বিসিবি।
বিপিএলে দুপুরের খাবার ও সন্ধ্যার নাস্তা সরবরাহ করে সেভেনহিল নামক একটি রেস্টুরেন্ট। রাজধানীর বাংলা মটর থেকে তৈরি হওয়া খাবার প্যাকেটে করে আসে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে পরিবেশন করা হয় দুপুরের খাবার। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে পরিবেশন করা হয় সন্ধ্যার নাস্তা।
গেল ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিপিএলে দুপুরে ও সন্ধ্যায়- দুই বেলা পরিবেশন করা হচ্ছে ওই রেস্টুরেন্টের খাবার। সকালে তৈরি খাবার মাঠে আসতে আসতে হয়ে যায় ঠাণ্ডা। এই খাবারের মান নিয়ে আগে থেকেই তাই প্রশ্ন উঠছিল। অনেকের অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বিষয়টি গুরুতর হয়ে দেখা দিয়েছে।
মাছরাঙা টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদ চৌধুরী জানান, আগের দিন শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে এই খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে যান তিনি, ‘আমার গত রাতে ফুড পয়জনিং হয়েছে। সারা রাতে কঠিন সময় কেটেছে। যেমন পাতলা পায়খানা, তেমন বমি। এক পর্যায়ে বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। আজ (শনিবার) মাঠে আসার মতো অবস্থা নেই।’
বিসিবির ওয়েবসাইট টাইগার ক্রিকেটে কাজ করা রিমন ইসলামেরও হয়েছিল একই অবস্থা, জ্ঞান হারিয়ে বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনিও।
দৈনিক প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ বলেন, এই খাবার একদিন খেয়ে তিনিও দুদিন পেটের পীড়ায় ভুগেছেন।
যমুনা টেলিভিশনের ক্রীড়া প্রতিবেদক তাহমিদ অমিত জানান, তার দুই সহকর্মী আলমগীর হোসেন ও সালাহউদ্দিন সুমন এই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে এদিন কাজে যোগ দিতে পারেননি। একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার দেব চৌধুরীও আগের দিন এই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় মাঠে আসতে পারেননি।
অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিং বিডির ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান জানান, এবার বিপিএলের খাবার খেয়ে গেল দুদিন ধরে মাঠে আসতে পারছেন না তিনি, ‘আমি গত পরশু খাবার খেয়ে বাড়ি ফেরার পর খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। ফুড পয়জনিং সমস্যার কারণে গেল দুদিন মাঠেও যেতে পারিনি।’
ঢাকা ট্রিবিউনের আলোকচিত্রি মোহাম্মদ মানিকেরও একই অভিযোগ, ‘রাত থেকে শরীর খারাপ। খাবার স্যালাইনের উপর আছি। খুবই নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়েছে।’
আগের দিন খেলা কাভার করতে এসেছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের নাবিদ ইয়াসিন। রাতে বাসায় ফেরার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান তিনিও, ‘সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। বাথরুমে যাওয়া-আসা করেছি। এখন শরীর খুব দুর্বল।’
বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম প্রেসবক্সে এসে পুরো ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একসঙ্গে এত জনের অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারাও উদ্বিগ্ন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং বিব্রতকরও বটে। আমি নিজেও এই খাবার খাই। খাবারে সমস্যা ধরা পড়ার পর দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে যে খাবার পরিবেশন করা হবে, তাতে আরও বাড়তি নজরদারি থাকবে।’
যাদের খাবার নিয়ে এই অবস্থা, খাবার সরবরাহকারী সেই সেভেনহিল রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার শাহাবুদ্দিন আহমেদ উৎপল জানান, এর মধ্যেই তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে বিসিবি, ‘বিসিবির কাছ থেকে খাবার নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা আমাদের খাদ্য তৈরি করা কমিটি নিয়ে বৈঠক করব। কেন এবং কী কারণে এমনটি হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করব।’
তিনি জানান, আগেও তারা বিসিবিতে খাবার সরবরাহ করেছেন, কিন্তু কোনো অভিযোগ আসেনি, ‘আমরা আগেও একাধিকবার বিসিবিতে খাবার দিয়েছি। আগে কখনও এমন অভিযোগ আসেনি।’
বিসিবির খাবারের মান নিয়ে অনেক দিন থেকেই প্রশ্ন ছিল। বিসিবির খাবারের বিষয়টি দেখ-ভালের দায়িত্ব লজিস্টিক বিভাগের। লজিস্টিক বিভাগের চেয়ারম্যান ইসমাইল হায়দার মল্লিক বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলেরও সদস্য সচিব। খাবারের এই বেহাল দশা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি, ‘বিষয়টি আমার কানে এসেছে। খুবই দুঃখজনক। আমরা ব্যাপারটা তদন্ত করছি। আর খাবার বদলে দেওয়া হচ্ছে।’
Comments