১৫ ডিসেম্বর, বুধবার, ১৯৭১

আজ হোসেন সাহেব এবং ওঁর নিচতলার ভাড়াটে আসলাম সাহেব সপরিবারে আমাদের বাসায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন ছেলে-বুড়ো মিলে পঁয়তাল্লিশজন লোক আমার বাসায়।
Jahanara Imam
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ছবি: সংগৃহীত

আজ হোসেন সাহেব এবং ওঁর নিচতলার ভাড়াটে আসলাম সাহেব সপরিবারে আমাদের বাসায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন ছেলে-বুড়ো মিলে পঁয়তাল্লিশজন লোক আমার বাসায়।

আজ সারাদিন কান ঝালাপালা করে রকেটিং এবং স্ট্রেফিং চলেছে। সারাদিন কানে তুলো, ঘাড়ে লেপ, মাথা বিছানায় গোঁজা।

আজ সাড়ে আটটা-সাড়ে বারোটা কারফিউ নেই। খবর পেলাম গতকাল পেছনের গলির এক বাড়িতে বোমা পড়ে শরীফের বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে মারা গেছে। ঐ বোমার আঘাতেই গতকাল ইলেকট্রিক এবং টেলিফোনের তারও ছিঁড়েখুঁড়ে গেছে।

আজ সারাদিন কোলকাতা রেডিও খোলা আছে। বারবার শুনতে পাচ্ছি- পাক আর্মিকে সারেন্ডার করার নির্দেশ। এজন্য আজ বিকেল পাঁচটা থেকে আগামীকাল সকাল নয়টা পর্যন্ত আকাশযুদ্ধ বন্ধ থাকবে- বলা হচ্ছে।

এই রকম মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণের মধ্যেই সারা সকাল ধরে এসেছে ইলা, বাদশা, আতা ভাই, কলিম, নজলু, হুদা, রেণু, মঞ্জুর, আতিক, হামিদা, জুবলী, রফিক, মাসুমা। সবাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর আমি সবাইকে বকছি এরকম স্ট্রেফিংয়ের মধ্যে কেন বেরিয়েছে? মাথার ওপর প্লেনের শব্দ হলেই ওদেরও দু’হাতে কান চেপে বিছানায় মাথা গুঁজে বসতে বলছি। মঞ্জুর বললেন যে গভর্নমেন্ট হাউজে হেভি বম্বিং হয়েছে। বাঁকাকে তাই মতিঝিলের অফিস থেকে তুলে ধানমন্ডিতে তার ভাগনে প্রিন্সের বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। গভর্নর মালেক হোটেল ইন্টারকনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ইন্টারকনকে এখন ইন্টারন্যাশনাল জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

লুলু গত দু’দিন আসতে পারেনি। আজ এগারোটার দিকে এসে ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব। সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না মাত্র দেড় দিনের ব্যবধানে শরীফের হার্ট এটাক, মুত্যু, জানাজা এবং দাফন পর্যন্ত শেষ! বিছানায় মাথা গুঁজে অবোধ শিশুর মত কাঁদতে লাগল সে।

এর মধ্যে রান্নাঘরের দিকটাও সামলাতে হচ্ছে। ছয়টি বাড়ির ছয়টি বিভিন্ন পরিবারের পঁয়তাল্লিশজন লোকের রান্নার দায়িত্ব কেউই আগ বাড়িয়ে নিচ্ছে না। অগত্যা লক্ষৌয়ি আদব-কায়দা বিসর্জন দিয়ে আমাকেই আগ বাড়াতে হল। একেবারে নাম ধরে ডেকে সকালের নাশতা ও চা বানানো থেকে শুরু করে দুপুর ও রাতের রান্না ও পরিবেশনের ডিউটি বন্টন করে চার্ট বানিয়ে দিলাম।

এই ডামাডোলের মধ্যে বাবার জন্য স্পেশাল রান্না করা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঞ্জু সমাধান করে দিল এ সমস্যার। ওদের বাসা থেকে বাবার জন্য সকালে নরম রুটি, দুপুরে নরম ভাত, কম মশলার মাছের ঝোল, এসব করে বয়ে এনে বাবাকে খাওয়াচ্ছে।

আরও পড়ুন:

১৪ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, ১৯৭১

১৩ ডিসেম্বর, সোমবার, ১৯৭১

১২ ডিসেম্বর, রবিবার, ১৯৭১

Comments

The Daily Star  | English
As things stand, Bangladesh election is all but doomed

244 aspirants to fight for 20 seats in Dhaka

A total of 21 aspirants, the highest of all seats, will contest for the Dhaka-5 constituency, which consists of areas of Demra and a part of Kadamtali

32m ago