১৭ বছর পর গোলশূন্য বার্সা-রিয়াল দ্বৈরথ
বল দখলে বার্সেলোনার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার পাশাপাশি আক্রমণেও ভীতি ছড়াল রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয়ার্ধে গ্যারেথ বেলের কল্যাণে বলও জালে জড়াল তারা। কিন্তু তা বাতিল হলো অফসাইডের কারণে। বিরতির পর বার্সাও খেলল প্রথমার্ধের তুলনায় বেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল। কিন্তু রিয়ালের জালের ঠিকানা খুঁজে পেল না তারা। ফলে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৭ বছর পর স্পেনের ক্লাব ফুটবলের দুই পরাশক্তির লড়াই শেষ হলো গোল ছাড়াই।
বুধবার রাতে ন্যু ক্যাম্পে স্প্যানিশ লা লিগায় বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। এর আগে ২০০২ সালে গোলের দেখা না পেয়ে ম্যাচ শেষ করেছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এই নিয়ে রিয়ালের বিপক্ষে টানা সাত ম্যাচে অপরাজিত থাকল বার্সা। দলটির কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের স্পর্শ করলেন পেপ গার্দিওলার গড়া রেকর্ড।
প্রত্যাশিত রোমাঞ্চ না ছড়ালেও দুদলের খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনার কোনো কমতি ছিল না। মোট আট ফুটবলার দেখেন হলুদ কার্ড। বার্সার তিন ও রিয়ালের পাঁচ তারকাকে সাজা দেন রেফারি।
ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরুর দিকে বরাবরের মতো বল দখলের লড়াইয়ে আধিপত্য দেখায় বার্সেলোনা। তবে সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি দলট। বিপরীতে, ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে রিয়াল। একের পর আক্রমণে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা ব্যতিব্যস্ত করে রাখে বার্সার রক্ষণকে। ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটিও তারাই পায়। দশম মিনিটে ইস্কোর ব্যাক-হিল থেকে বল পেয়ে যান করিম বেনজেমা। তার বাম পায়ের মাটি কামড়ানো শট সহজেই লুফে নেন মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগান।
১৭তম মিনিটে প্রায় এগিয়েই গিয়েছিল রিয়াল। কাসেমিরোর হেড গোললাইন থেকে ফিরিয়ে সে যাত্রা বার্সাকে রক্ষা করেন জেরার্দ পিকে। ছোট করে দ্রুত নেওয়া কর্নার থেকে ডি-বক্সের ভেতরে ক্রস করেছিলেন ইস্কো। লাফিয়ে উঠে হেড করেছিলেন কাসেমিরো। বল যখন নিশ্চিতভাবেই জালের দিকে যাচ্ছিল, তখনই বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান পিকে।
২৬তম মিনিটে ১০ সেকেন্ডের ব্যবধানে দুবার রিয়ালের প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন টের স্টেগান। এই জার্মান গোলরক্ষক বেনজেমার কাট-ব্যাক পা দিয়ে রুখে দেওয়ার পর বল পেয়ে যান কাসেমিরো। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া জোরালো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন বার্সা শট স্টপার।
বার্সা ম্যাচে নিজেদের প্রথম সুযোগটি পায় ৩১তম মিনিটে। গোলও পেয়ে যেতে পারত তারা। বাম প্রান্ত থেকে জর্দি আলবার ক্রস রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ফিরিয়ে দিলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। ডি-বক্সের ভেতর থেকে অরক্ষিত গোলপোস্ট তাক করে ফিরতি শট নেন লিওনেল মেসি। কিন্তু তার প্রচেষ্টা গোললাইন থেকে ফিরিয়ে রিয়ালকে বাঁচিয়ে দেন সার্জিও রামোস।
পরের মিনিটে ফেদেরিকো ভালভার্দের ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট বার্সার গোলপোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। চার মিনিট পর টনি ক্রুসের শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বেশ খানিকটা বাইরে দিয়ে।
রিয়ালের আক্রমণের ভিড়ে প্রথমার্ধের সেরা সুযোগটি অবশ্য পায় বার্সেলোনা। কিন্তু ৪১তম মিনিটে গোলের নিশ্চিত সুযোগ হাতছাড়া করেন আলবা। রিয়ালের রক্ষণভাগকে চূর্ণ করে মেসি উঁচু করে বল বাড়ান ডি-বক্সের ভেতরে। আলবার সামনে তখন কেবল কোর্তোয়া। কিন্তু শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। তার বাম পায়ের কোণাকুণি শট ডান দিকের পোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায়।
বিরতির পরও আক্রমণের ধার বজায় রাখে অতিথি রিয়াল। তবে খেলার ধারার বিপরীতে ৬০তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়ে যায় বার্সা। বাম প্রান্ত থেকে ক্রস করেছিলেন আতোঁয়া গ্রিজমান। তবে অবিশ্বাস্যভাবে বলে ঠিকঠাকভাবে শট নিতে ব্যর্থ হন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মেসি। আট মিনিট পর পাল্টা-আক্রমণে ভালো একটি সুযোগ এসেছিল বেলের কাছে। তবে ওয়েলস ফরোয়ার্ড গোলপোস্টের বেশ কাছ থেকে বল মারেন বাইরের দিকের জালে।
৭২তম মিনিটে বেল বল জালে পাঠালেও তা বাতিল করে দেন রেফারি। তবে তিনি অফসাইডে ছিলেন না। আক্রমণে ওঠার সময় বিধি ভঙ্গ করেছিলেন বেলকে বল যোগান দেওয়া ফারল্যান্ড মেন্ডি। এরপর ম্যাচের শেষ দিকে আক্রমণে গতি বাড়িয়েছিল স্বাগতিক বার্সা। নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা হয় অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোল আদায় করে নিতে পারেনি কোনো দলই।
অমীমাংসিত লড়াইয়ের পর ১৭ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রইল লা লিগার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে তাদের পরের অবস্থানে রয়েছে স্পেনের সফলতম ক্লাব রিয়াল।
Comments