আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে রাস্তা ইজারা

‘মনে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন রাস্তাটি উন্মুক্ত করতে চায় না’

প্রায় সাত বছর আগে, পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বলধা গার্ডেন সংলগ্ন একটি রাস্তাকে ‘উন্মুক্ত এবং পরিত্যক্ত’ উল্লেখ করে অবৈধভাবে লিজ দেওয়া হয়েছিলো একটি মার্কেট তৈরির জন্য। সম্প্রতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলেছে, তবে রাস্তাটিকে ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।
রাস্তা অবৈধভাবে লিজ দিয়ে মার্কেট তৈরির পর সম্প্রতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) স্থাপনাটি ভেঙে ফেললেও রাস্তাটিকে ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ফেলে রেখেছে। ছবি: স্টার

প্রায় সাত বছর আগে, পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বলধা গার্ডেন সংলগ্ন একটি রাস্তাকে ‘উন্মুক্ত এবং পরিত্যক্ত’ উল্লেখ করে অবৈধভাবে লিজ দেওয়া হয়েছিলো একটি মার্কেট তৈরির জন্য। সম্প্রতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলেছে, তবে রাস্তাটিকে ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।

পুরো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙ্গা ইটের কণা। কংক্রিট স্ল্যাবগুলি রাস্তায় পড়ে আছে এবং দুই-এক জায়গায় দেয়াল এখনও দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার দক্ষিণ প্রবেশমুখে গাছের ডাল ফেলে রাখা হয়েছে এবং উত্তর প্রবেশমুখে পড়ে আছে হাঁস-মুরগির খাঁচা।

ওয়ারীর ৪১ নং ওয়ার্ডের নবাব স্ট্রিট এবং হেয়ার স্ট্রিটের মাঝখানে বালধা গার্ডেনের পশ্চিম দেয়াল সংলগ্ন রাস্তার দৃশ্য এটি।

ওয়ারীর এক দোকানদার হাফিজুর রহমান এই প্রতিবেদককে বললেন, “এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে হাঁটার কোনো উপায় নেই। হাঁটতে গেলে যে কেউ হোঁচট খাবে।”

তিনি আরও বললেন, “রাতে এই জায়গাটিতে ভাসমান মাদক ব্যবহারকারীদের আড্ডা বসে।”

নারিন্দার বাসিন্দা মাহমুদ চৌধুরী জানালেন, গত কোরবানির ঈদের আগে সিটি কর্পোরেশন বাজারটি ভেঙে ফেলে। “কিন্তু, মনে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন রাস্তাটি উন্মুক্ত করতে চায় না,” মন্তব্য করেন তিনি।

জানা যায়, ২০১২ সালে বলধা গার্ডেনের কাছে সরকারি রাস্তাটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের কাছে ইজারা দেওয়ার এক উদ্ভট পদক্ষেপ নেয় ডিএসসিসি। আওয়ামী লীগ কর্মীরা সেই রাস্তায় ৪৪টি দোকান স্থাপন করে এবং এটিকে কাঁচাবাজার বানায়। কিছু দোকান ভাড়া দেওয়া হয় এবং কিছু বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় নেতারা কয়েকটি দোকান নিজেদের জন্য রেখে বাকিগুলো প্রতিটি ৬ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে, ডিএসসিসির ৪১ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সরোয়ার হাসান আলো, ডিএসসিসির প্রাক্তন প্রশাসক খলিলুর রহমান এবং আরও ৪৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধভাবে সেই রাস্তার উপর বাজার নির্মাণ করায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের গোড়ার দিকে ৪১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেনের ছেলে তাসব্বিবর হোসেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী শহিদুল হাসান যৌথভাবে রাস্তাটিকে ‘উন্মুক্ত এবং পরিত্যক্ত’ দেখিয়ে রাস্তার ১,৯৮০ বর্গফুট বরাদ্দ চান।

মামলার এফআইআর অনুসারে, ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তাদের জরিপ করে রাস্তাটিকে কোনও বাজারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে কী না তা দেখার কথা ছিলো। কিন্তু, তারা তা করেনি।

এফআইআর অনুযায়ী, ডিএসসিসি কর্মকর্তারা নিজেরাই এই বেআইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন।

ডিএসসিসির বর্তমান প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, “যদি এখনও ধ্বংসাবশেষ থেকে যায় তবে সেগুলি শীঘ্রই পরিষ্কার করা হবে।”

তিনি জানান, দুদকের মামলা দায়েরের পর ইজারা দেওয়া প্রক্রিয়ায় জড়িত ডিএসসিসির ছয় জরিপকারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

দুদকের মামলাটি ঝুলে আছে চার্জশিট দেওয়ার অপেক্ষায়। দুদক মামলার তদন্ত করে চার্জশিট দেওয়ার দায়িত্ব দেয় উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামকে। কিন্তু, তিনি এখনো মামলার চার্জশিট দেননি।

যোগাযোগ করা হলে হাফিজুল বলেন, “আমি শুনেছি বাজারটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।” তবে, অভিযোগপত্র দাখিল করতে বিলম্বের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

মুঠোফোনে এবং খুদে বার্তার মাধ্যমে বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ডিএসসিসির কাউন্সিলর সরোয়ার হাসান আলোর মন্তব্যে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট, দ্য ডেইলি স্টার ‘Road Given to AL men’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে অবৈধভাবে রাস্তায় কাঁচাবাজার নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিলো।

সে বছরের ১৪ ডিসেম্বরে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. এজারুল হক আকন্দের একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ কাঁচাবাজার নির্মাণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কেনো নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিলো।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago