ব্যর্থতার ঘোরটোপ থেকে বের হতে পারেনি বিএনপি

রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক বিএনপির

২০১৯ ছিলো বিএনপির জন্য হতাশার বছর। গত সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরে তারা নিজেদের পুনর্গঠিত করতে পারেনি। এমনকী, জেলে থাকা চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনও করতে পারেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই বিএনপিকে পুনরুজ্জীবিত করার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এজন্য দলটি সরকারকে দোষারোপ করে আসছে।

গত এক বছরে খালেদার মুক্তির জন্য বিএনপির আন্দোলন কার্যক্রম কয়েকটি মিছিল, সংবাদ সম্মেলন ও সেমিনারে সীমাবদ্ধ ছিলো।

বিএনপির নেতাদের দাবি, বিচার বিভাগের উপর সরকারের প্রভাব থাকায় খালেদার মুক্তির আইনি লড়াইয়ে হেরে গেছে তারা। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে কারাবন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।

বছরের শুরুর দিকে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান। দলীয় নেতাদের কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রতিটি স্তরে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।

কিন্তু, ৮২টি কমিটির মধ্যে এ পর্যন্ত নয়টি গঠন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের শীর্ষ নেতারা তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নিজেদের পছন্দে কমিটি গঠন করায় এ উদ্যোগ হোঁচট খেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “সবাই নিজের প্রভাব ধরে রাখতে চান, এ কারণেই তারা কাউন্সিল ডাকছেন না। তারা নিজেরাই নেতা বাছাই করতে চান। কিন্তু, তৃণমূলের নেতারা এটি মানতে নারাজ।”

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জুলাই মাসে মাদারীপুরে তিন সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে একটি কাউন্সিলের আয়োজন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য বলা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ওই কমিটির আহ্বায়ক জাফর আলী জেলার আটটি ইউনিটে নিজের কাছের লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করেন।

কমিটির সদস্য সচিব জাহানদার আলী জাহান অভিযোগ করে বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করেন তিনি। পরে কেন্দ্র থেকে মাদারীপুর জেলার নব গঠিত কমিটিগুলো স্থগিত করে দেওয়া হয়।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, বেশিরভাগ জেলাতেই একই ঘটনা ঘটছে।

বিএনপির দলীয় নীতিমালা অনুযায়ী, আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন না।

জেলার এক নেতা বলেন, “দল পুনর্গঠনে অন্যতম বাধা হলো কেউই তার জায়গা ছাড়তে চান না। কারণ, তারা যতো বেশি সময় আহ্বায়ক পদে থাকতে পারবেন, ততো বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।”

এছাড়াও, একজন নেতা একটি পদে থাকার বিধান থাকলেও দলের শীর্ষ নেতারা তা মানছেন না।

২০১৬ সালের অনুষ্ঠিত সর্বশেষ দলীয় কাউন্সিলে এই বিধান চালু করে বিএনপি। খালেদা জিয়া তা বাস্তবায়নের চেষ্টাও করেছিলেন। তবে, দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকায় তিনি এই প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি।

তারেক নিজেও এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। আসলে আমরা খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করতে পারিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই আমাদের একটু সময় লাগছে।”

উল্লেখ্য, বিএনপির সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান ঝিনাইদহ বিএনপির আহ্বায়ক, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সারোয়ার বরিশাল বিএনপির সভাপতি, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন নরসিংদী জেলা কমিটি, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি, যুগ্ম সচিব আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর বিএনপির সভাপতি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএনপি এর অঙ্গ-সংগঠন কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল এবং ওলামা দলকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিলেও এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে দোষারোপ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

11h ago