সুপার ওভারের রোমাঞ্চ শেষে জয় পেল কুমিল্লা

ম্যাচের এক সময় মনে হয়েছিল বেশ বড় জয়ই পেতে যাচ্ছে কুমিল্লা ওয়ারিয়ার্স। ৩৩ রানেই সিলেট থান্ডারের টপ অর্ডারের পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছিল দলটি। সেখান থেকে অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে প্রায় জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন সোহাগ গাজী। তবে সতীর্থদের ব্যর্থতায় জয় মিলেনি। সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ। তবে এক ওভারের রোমাঞ্চপূর্ণ ক্রিকেটের পর জয় পেয়েছে কুমিল্লাই। ফলে শেষ চারে খেলার স্বপ্ন ধরে রাখল দলটি।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ম্যাচের এক সময় মনে হয়েছিল বেশ বড় জয়ই পেতে যাচ্ছে কুমিল্লা ওয়ারিয়ার্স। ৩৩ রানেই সিলেট থান্ডারের টপ অর্ডারের পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছিল দলটি। সেখান থেকে অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে প্রায় জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন সোহাগ গাজী। তবে সতীর্থদের ব্যর্থতায় জয় মিলেনি। সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ। তবে এক ওভারের রোমাঞ্চপূর্ণ ক্রিকেটের পর জয় পেয়েছে কুমিল্লাই। ফলে শেষ চারে খেলার স্বপ্ন ধরে রাখল দলটি।

সুপার ওভারে কুমিল্লার হয়ে বল করতে আসেন মুজিব উর রহমান। তার প্রথম বল থেকে বাউন্ডারি তুলে নেন রাদারফোর্ড। তবে পরের পাঁচ বলে দারুণ নিয়ন্ত্রণ রেখে মাত্র ৩ রান দেন মুজিব। ফলে এক ওভারে কুমিল্লার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ রান। সে লক্ষ্যে প্রথম দুই বলেই রানআউট করার দারুণ সুযোগ ছিল সিলেটের। তবে দুইবারই রান আউট করার সুযোগ মিস করেন বোলার নাভিন-উল-হক। তা না পারলেও তৃতীয় বলে দারুণ এক স্লোয়ারে সৌম্য সরকারকে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ পরিণত করেন। কিন্তু চতুর্থ দারুণ বাউন্ডারি মেরে স্কোর সমান করেন ডেভিড উইজে। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে করেন দলের জয় নিশ্চিত।

এ নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা ৪৩তম সুপার ওভারের ম্যাচ। আর দ্বিতীয় সুপার ওভার দেখল বিপিএল। এর আগে চলতি বছরেই ষষ্ঠ আসরে চট্টগ্রামের মাঠে চিটাগং ভাইকিংস ও খুলনা টাইটান্সের ম্যাচটি সুপার ওভারে গড়িয়েছিল। তবে এদিনের ম্যাচটি বেশ সহজ ভাবেই জেতার কথা ছিল কুমিল্লার। কিন্তু পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়ার পর তাদের ফিল্ডারদের শরীরীভাষা ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশ কিছু ক্যাচ মিসের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ে বেশ কিছু সহজ মিস হয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয়ই পেয়েছে দলটি।

অন্যদিকে সিলেট এর আগের আট ম্যাচে মাত্র একটি জয় পেয়েছিল। তবে যদি-কিন্তুর হিসেবে নকআউট পর্বে যাওয়ার আশাটা তবুও টিকে ছিল। ঘরের মাঠে অবিশ্বাস্য কিছু করে ফেলার প্রত্যয় ছিল তাদের। কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারলো না দলটি। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সোহাগ গাজীর ক্যামিও ইনিংসটি বৃথা যায়। বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় সিলেটের।

অন্যদিকে কুমিল্লা হারলেও নকআউট পর্ব বেশ কঠিন হয়ে যেত তাদের জন্য। কারণ এরপর বাকী সব ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি অন্য দলগুলোর ফলাফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হতো তাদের। তবে এদিন বোলারদের সুবাদে দারুণ ক্রিকেট উপহার দিয়ে ম্যাচ জিতে নিজেদের কাজটা এগিয়ে রাখল দলটি। বিশেষ করে সুপার ওভারে মুজিবের বোলিং ছিল অতিমানবীয়। এর আগে মূল ম্যাচে ৪ ওভার বল করে মাত্র ১২ রান খরচ করে শিকার করেছিলেন ৪টি। যার ফলে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও মিলে তার।

এদিন দুই দলের নিয়মিত দুই অধিনায়ক কেউই ছিলেন না মাঠে। স্ত্রীর অসুস্থতায় কুমিল্লার অধিনায়ক ডেভিড মালান ফিরে গেছেন দেশে। তার জায়গায় নেতৃত্বে ছিলেন আদ্রে ফ্লেচার। আর আগের ম্যাচে চোট পাওয়ায় ছিলেন সিলেটের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনও। তার জায়গায় টস করতে নামেন সৌম্য সরকার। টস জিতলেও ম্যাচ জিততে পারেননি নতুন অধিনায়ক। 

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাই যা ভালো ছিল কুমিল্লার। দুই ওপেনার উপুল থারাঙ্গা ও স্টিয়ান ভ্যান জিল ওপেনিং জুটিতে করেন ৪২ রান। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। মূলত স্টিফেন রাদারফোর্ডের তোপে পড়ে ধস নামে দলটির। তাতে গড়ে ওঠেনি বলার মতো কোন জুটি। রানের গতিতেও ভাটা পড়ে। প্রথম ১০ ওভারে ৮০ করতে পারলেও শেষ ১০ ওভারে রান আসে মাত্র ৬০। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪০ রানের বেশি করতে পারেনি দলটি।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন লঙ্কান রিক্রুট থারাঙ্গা। ৩১ বলে ৯টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। এছাড়া ১৪ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহিদুল ইসলাম অংকন। সিলেটের পক্ষে ৪ ওভারে ১৯ রান খরচ করে মূল্যবান ৩টি উইকেট তুলে নেন রাদারফোর্ড। দারুণ বোলিং করেছেন জাতীয় দলের পেসার ইবাদত হোসেনও। ৩৩ রানের বিনিময়ে পান ৩টি উইকেট। সোহাগ গাজীর শিকার ২টি উইকেট।

সাধ্যের মধ্যে লক্ষ্য পেয়েও আশানুরূপ ব্যাটিং করতে পারেনি স্বাগতিকরা। দলীয় ৫ রানে বিদায় নেন দুই ওপেনার। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফিরে যান দলের অন্যতম ভরসা জনাথন চার্লস। তার দেখানো পথেই হাঁটেন দলের বাকী দুই ক্যারিবিয়ান তারকা রাদারফোর্ড ও অধিনায়ক ফ্লেচারও। মোহাম্মদ মিঠুনও হন ব্যর্থ। দলীয় ৩২ থেকে ৩৩ রানে যেতেই শেষ মূল তিন উইকেট। কার্যত তখন হার দেখতে থাকে দলটি।

কিন্তু তখন যেন ভিন্ন পণ করে মাঠে নামেন সোহাগ গাজী। শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করে দলকে জয়ের ভিতও গড়ে দেন তিনি। ৩১ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় করেন ৫২ রান। নাজমুল হোসেন মিলনকে নিয়ে ৭০ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তিনি। তাতে মিলনের অবদান মাত্র ১৩ রান। বাকিটা একাই করেন গাজী। তবে ১৭তম ওভারে তিনটি উইকেট তুলে ম্যাচের মোর আবার ঘুরিয়ে দেন মুজিব। স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ করতে আবারও তিনটি উইকেট হারায় সিলেট। আবার চাপে পড়ে যায় দলটি।

তবে শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আবারও আশা জাগিয়েছিলেন মনির হোসেন ও নাভিন-উল-হক। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ রানের। প্রথম দুই বল থেকে দুটি বাউন্ডারি নেন নাভিন। ফলে শেষ চার বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ রানের। কিন্তু ৬ রান তুলতে পারে দলটি। শেষ বলে রানআউট হয়ে যান মনির।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট থান্ডার: ২০ ওভারে ১৪০/৯ (থারাঙ্গা ৪৫, জিল ১০, সৌম্য ৫, সাব্বির ১৭, ইয়াসির ৫, উইজে ১৫, অংকন ১৯*, রনি ৭, সানজামুল ০, মুজিব ৩; নাভিন ০/২৫, ইবাদত ৩/৩৩, গাজী ২/২৩, নাঈম ০/১২, মনির ০/২১, রাদারফোর্ড ৩/১৯)।

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ১৪০ (চার্লস ০, রনি ২, মিঠুন ১৩, রাদারফোর্ড ১৫, ফ্লেচার ১, মিলন ১৩, গাজী ৫২, নাঈম ০, নাভিন ১৫, মনির ১৬, ইবাদত ৩*; সানজামুল ১/২৪, মুজিব ৪/১২, উইজে ১/৩১, আল-আমিন ২/৩০, সৌম্য ০/২২, হায়দার ০/১৭)।

ফলাফল: সুপার ওভারে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুজিব উর রহমান (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago