শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে উত্তাল ভারত
ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) চত্বরে মুখোশধারীদের হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দমিয়ে রাখতে এই হামলা হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সেসময় তারা হামলার জন্য বিজেপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদকে (এবিভিপি) দায়ী করেন।
গতরাতে (৫ জানুয়ারি) আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মোমবাতি নিয়ে মৌন মিছিল করেছেন। পুনের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’র শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও গতরাতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
জামিয়া টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (জেটিএ) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেটিএ এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা করে। জেএনইউ ‘সিল’ করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। অথচ হামলাকারীরা ক্যাম্পাসেই লুকিয়ে রয়েছে।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলার সময় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। হামলাকারীদের পালাতে পুলিশ সাহায্য করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
পুলিশের এমন ভূমিকার প্রতিবাদ জানাতে দিল্লির আইটি জংশন পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে সমবেত হয়েছেন শত শত বিক্ষোভকারী। এক বিক্ষোভকারী এনডিটিভিকে বলেন, “জেএনইউতে হামলার পর থেকেই আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু, পড়তে এসে তাদের কেনো আতঙ্কে থাকতে হবে?”
‘আজ আমার মেয়ে, কাল অন্য কেউ’
এ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ। তার মাথায় পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে।
ঐশীর বাবা এনডিটিভিকে বলেছেন, “দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমরা খুব ভয়ে আছি। আজ আমার মেয়ের উপরে হামলা হয়েছে। আগামীকাল অন্য কারো উপরে হবে। হয়তো আমাকেও মারতে পারে।”
ঐশীর মা জেএনইউ উপাচার্য এম জগদীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করে বলেছেন, “উপাচার্যের উচিৎ পদ ছেড়ে দেওয়া। তিনি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ক্ষমতা যার নেই, তার পদত্যাগ করা উচিত।”
বিরোধীদের প্রতিবাদ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য কাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাজনক।”
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অবিলম্বে সংঘাত থামিয়ে শান্তি ফেরানোর জন্য দিল্লি পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই সুরক্ষিত না থাকলে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে?”
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, “ফ্যাসিবাদীরা ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে ভয় পাচ্ছে।”
এই হামলাকে “বিজেপি সরকারের বিভাজনের রাজনীতির ফলাফল” বলে মন্তব্য করেছে কংগ্রেস।
হামলার নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা শশী থারুর, পি চিদাম্বরম, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা প্রমুখ।
পি চিদাম্বরম বলেছেন, “হিংসা থেকেই এই হামলা হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে সরকারের সমর্থন।”
সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি টুইটার বার্তায় লিখেছেন, “শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে প্রশাসন ও এবিভিপি একসঙ্গে হামলা চালিয়েছে।”
উল্লেখ্য, গতকাল (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় একদল মুখোশধারী। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ছাড়াও তারা প্রতিষ্ঠানটিতে ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী এবং ১২ শিক্ষক আহত হয়েছেন।
Comments