মালয়েশিয়ায় বিনা খরচে শ্রমিক নিয়োগের ইঙ্গিত
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে বিনা খরচে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হবে বলে মালয়েশিয়া থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দেশটির অনলাইন পোর্টাল মালয়েশিয়াকিনিতে বলা হয়েছে, চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে নেপালের সঙ্গে যে ধরণের চুক্তি হয়েছিলো সেটির মতোই হবে এই চুক্তি।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান বলেছেন, “নেপালের সঙ্গে আমাদের যখন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তখন আমরা বলেছিলাম, আমাদের এখানে শ্রমিক পাঠাতে কোনো খরচ লাগবে না।”
গত ৭ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানই উড়োজাহাজ ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ বহন করবে।”
এই উদ্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পারসন (টিআইপি) রিপোর্টে মালয়েশিয়াকে আবারও টায়ার-২ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় তৃতীয়বারের মতো নাম এলে আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিবে যুক্তরাষ্ট্র। তা এড়াতেই আমাদের এ ধরনের উদ্যোগ।”
মালয়েশিয়ায় প্রায় আট লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। দেশটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত করে। ১০ বাংলাদেশি এজেন্টের একটি সিন্ডিকেট ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে চার লাখ টাকা নিয়ে শ্রমিক পাঠানোর অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া স্থগিত করে দেয় মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার আগের সরকার সেদেশে শ্রমিক নিয়োগে বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছিল। এরপর মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন সরকার শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত করে অনিবন্ধিত প্রবাসীদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নিয়োগকারীদের আইন লঙ্ঘন করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে।
বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য নতুন সরকার একটি কমিটিও গঠন করেছিল। তবে, কোন কোন বিষয় সংস্কার করা হয়েছিল তা জানা না গেলেও, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কোনো ব্যয়ভার বহন করতে হবে না’ এই শর্তে গত বছর নেপালের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে মালয়েশিয়া।
এদিকে, এখনও নতুন কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলেও, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা গত বছর বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন।
গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, স্বল্প নিয়োগ ব্যয় এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তিনি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে চান না।
তিনি অবশ্য ‘শূন্য অভিবাসন ব্যয়’ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। নিয়োগে উচ্চ-ব্যয়ের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের নির্যাতন ও পাচারের নজির থাকায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ‘শূন্য অভিবাসন ব্যয়’ নীতিটি বিশ্বব্যাপী প্রচার করছে।
পুত্রজায়ায় সাংবাদিকদের কুলাসেগারান বলেছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তির বিষয়ে অল্পকিছু বিষয় সমাধান করার বাকি।
“সমাধান হয়ে গেলে আমরা চুক্তির কাজ শুরু করব। মালয়েশিয়া সরকারের সে বিষয়ে ইচ্ছা এবং প্রস্তুতি উভয়ই আছে,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সরকারও নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমরা স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেয়ার বিষয়ে কাজ করছি।”
Comments