বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে সম্প্রচারিত হয়েছিলো
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কয়েক সপ্তাহ পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে লাখো উচ্ছ্বসিত মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। সেদিনকার সেই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিশ্বের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে সম্প্রচার করেছিলো।
বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করার দৃশ্যটিকে এনবিসি টেলিভিশনের ভাষ্যকার ‘আজ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
প্রতিবেদনটিতে বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলাদেশের জর্জ ওয়াশিংটন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং জনগণের এই স্বাগত জানানোর ঘটনাটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আবেগঘন ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। একই সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর যে টাস্কফোর্স পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সমর্থনে বঙ্গোপসাগরে এসেছিলো, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের ঠিক ওই মুহূর্তে সেই মার্কিন নৌবাহিনীর টাস্কফোর্সের বঙ্গোপসাগর ত্যাগের খবরটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অপর একটি আন্তর্জাতিক চ্যানেল এবিসি টিভি একই দিনে সম্প্রচার করে, ‘শেখের বিমানটি ঢাকায় অবতরণের আগে আকাশ থেকেই তিনি তাকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ আনুমানিক ১০ লাখ লোককে দেখতে পান।’ অসংখ্য উল্লসিত মানুষ বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে তার দিতে ছুটে যায়।
পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর ভুট্টোর নতুন পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধুকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেয়। পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে সেখান থেকে তিনি লন্ডনে যান। লন্ডন থেকে নতুন দিল্লিতে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি দিনের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনগামী একটি চার্টার্ড বিমানে উঠিয়ে দেওয়ার পর, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টোর দেওয়া উক্তি উদ্ধৃত করে তখনকার নিউজউইক রিপোর্ট করেছিলো ‘পাখি উড়ে গেছে।’
১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি নিউজউইক প্রকাশ করেছিলো, ‘কঠোর নিরাপত্তায় পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি ভুট্টো মধ্যরাতে মুজিবকে রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দরে নিয়ে যান এবং সেখানে তিনি তাকে একটি ভাড়া করা বিমানে তুলে দেন।’
নিউজউইক ‘মুজিব ফ্লাই’জ টু ফ্রিডম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, “মুজিবের বিমানটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। গত বসন্তে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ ইয়াহিয়া খান তাকে জেলখানায় আটকের পর থেকে বিশ্ববাসী ৫১ বছর বয়সী এই বাঙালি নেতাকে প্রথমবারের মতো দেখতে পেলো।”
Comments