যমুনায় রেলসেতু: কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বেড়েছে ৩,২১৬ কোটি টাকা

যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট কাজ শুরুর আগেই ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা বেড়েছে।
Bangla-1.png
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট কাজ শুরুর আগেই ৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা বেড়েছে।

গত ৯ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের ক্রয় কমিটি শর্তসাপেক্ষ এই অনুমোদন দিয়েছে।

বর্তমানে প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ১২ হাজার ৯৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদিত বাজেট থেকে ৩৩ শতাংশ বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিলো। তবে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদনের প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় পরে ক্রয় কমিটির অনুমোদন পায়।

গত ৯ জানুয়ারি ক্রয় কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, প্রকল্প ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার কারণে তারা ‘শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন’ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “রেলপথ মন্ত্রণালয়কে সংশোধিত বাজেট (প্রকল্প প্রস্তাবনা তথ্য- ডিপিপি) একনেকের অনুমোদনের জন্য দিতে হবে।

একনেকে সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন পাওয়ার পর এর কার্যাদেশ জারি করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ হবে। তবে আমরা অনুমোদন দিয়েছি যাতে তাদের আবার আমাদের কাছে (ক্রয় কমিটি) আসতে না হয়।”

প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, নতুন ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার রেলসেতুটি বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের মার্চে দুই লাইনের ডুয়েলগেজ রেলসেতুর কাজ উদ্বোধন করবেন।

দুটি প্যাকেজের আওতায় এই রেলসেতুটি বানানো হবে। জাপান সহজ শর্তে ঋণের মাধ্যমে এই বাজেটের সিংহভাগ খরচ বহন করছে।

ওবায়শি কর্পোরেশন, টিওএ কর্পোরেশন এবং জেএফই-এর যৌথ উদ্যোগে ছয় হাজার ৮০১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুর পূর্ব দিকের অংশ নির্মাণ করা হবে।

আইএইচআই এবং এসএমসিসি যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করবে পশ্চিম অংশ। পশ্চিম অংশের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

এই সেতু নির্মাণে যে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করবে তার সবগুলোই জাপান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।

কেনো ব্যয় বাড়লো

ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেরি হওয়ার এবং ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ জানা যাবে একনেকের সভায় সংশোধিত ডিপিপি আসার পর।”

রেলপথ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির ডিপিপিতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিলো। বিস্তারিতভাবে নকশা তৈরি হওয়ার পর আসল ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

নথি থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে ডিপিপি অনুমোদন পাওয়ার পর, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) অর্থায়নে পরামর্শদাতারা কয়েকটি গবেষণা করেছেন এর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিস্তারিত নকশা তৈরির জন্যে।

এই রেল সেতুতে স্টিল-পাইপ-শিট-পাইলের ভিত্তি, আবহাওয়া উপযোগী স্টিল, লাইনচ্যুত যাতে না হয় সে জন্য বিশেষ গার্ডের মতো নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথমবার ব্যবহার করা হবে।

রেলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা যেহেতু জানতেন না যে এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করা হবে, তাই তারা বাজেটের জন্য সঠিক অনুমান করতে পারেননি।

এই কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালের জুনে স্বাক্ষরিত ঋণ চুক্তি অনুযায়ী জাপান এই রেলসেতু ও রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে। প্রশাসনিক ব্যয়, শুল্ক ও ভ্যাট বহন করবে বাংলাদেশ।

যে কারণে রেলসেতু

রাজধানীর সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াত করা ট্রেনগুলোর দেরিতে চলাচল করা একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। এর একটি বড় কারণ বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর থাকা রেললাইনে চলাচলের সময় ট্রেনের গতিতে বিধিনিষেধ থাকা।

ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলা একটি ট্রেন সেতুর পূর্ব পাশের স্টেশন থেকে পশ্চিম পাশের স্টেশনে পৌঁছতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নেয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন একাধিকবার বলেছিলেন, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত দুটি রেললাইন এবং যমুনায় রেলসেতু না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনের সময়সূচী নিয়ে যে সমস্যা আছে, তা সমাধান করা যাবে না।

জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত একটি রেললাইন রয়েছে। ১৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথটি দিয়ে ৪২টি ট্রেন যাতায়াত করে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, এই রুটে সাবলীলভাবে সর্বোচ্চ ২২টি ট্রেন চলাচল করতে পারে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ দুটি রেললাইন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান জানান, নতুন সেতুটি হয়ে গেলে ট্রেনগুলোর দেরি হওয়া বন্ধ হবে এবং যোগাযোগের উন্নতি হবে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago