বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ১০২৪ মামলা
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নামে থানায় রয়েছে অন্তত এক হাজারেরও বেশি মামলা। ৬৯ জন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১ হাজার ২৪টি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ছয়জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১০টি মামলা। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৭-১৮ সালে ১১তম জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতির মাঠ যখন গরম, বিএনপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলার অর্ধেকেরও বেশি সে সময় হয়।
বেশিরভাগ মামলার কারণ ছিলো- ভাঙচুর-সহিংসতা, বিনা অনুমতিতে সভা-সমাবেশ করা, সরকারি কাজে বাধাদান প্রভৃতি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি এবং নারী নির্যাতনের ১০টি মামলা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের সব প্রার্থীর তথ্য পাওয়া গেলেও, উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডের ৩৬ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর হলফনামার তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
তাদের হলফনামা দ্রুতই নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম গতকাল (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপি সমর্থিত ৫৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৮৭৬টি ফৌজদারি মামলা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত চারজনের বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি মামলা।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি।
বিনা অনুমতিতে সভা, ভাঙচুর এবং সরকারি কাজে বাধাদান করায় সর্বোচ্চ ৬৩টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৪০টি মামলা হয় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এবং বাকিগুলি ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে।
ব্যবসায়ী সিরাজুল ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সমর্থিত হোসেন হায়দার হিরুর কাছে পরাজিত হন সেবার।
বিএনপি সমর্থিত অপর প্রার্থী হারুনুর রশিদ ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তার নামে ৫০টি ফৌজদারি মামলা হয়।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এর বাইরে আরও তিনটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।
পেশায় ব্যবসায়ী রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘সাজানো’ মামলা দিয়ে তাকে রাজনীতির বাইরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
“ক্ষমতায় আসার পর বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নামে এরকম ‘রাজনৈতিক মামলা’ দেয় সরকারি দল”, বলেন তিনি।
তবে তিনি আশা করেন, সরকার তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দিবে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আবার অন্যরকম।
আবুল কালাম আওয়ামী লীগের সমর্থনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার নামে পাঁচটি মামলা হয় ২০০৫ থেকে ২০০৮ এর মধ্যে।
সম্পত্তি আত্মসাৎ, সহিংসতা, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখার দায়ে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়।
তার হলফনামায় বলা আছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে সেখানে মামলা প্রত্যাহারের তারিখ উল্লেখ ছিলো না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ নাসিম মিয়ার নামে ২০০৩ সালে একটি অস্ত্র মামলা হয়েছিলো। ২০১২ সালে মামলাটি প্রত্যাহার হয়।
নাসিম তার হলফনামায় লিখেছেন, “২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।”
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী কোনো মামলার যেকোনো অভিযুক্তকে আদালতের সম্মতিতে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়াল হোসেনের নামে রয়েছে ছয়টি মামলা। ঢাকা দক্ষিণের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর মধ্যে ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে একটি মামলা হয়। অপহরণ, হত্যাচেষ্টা, সম্পত্তি আত্মসাৎ ও বিস্ফোরক রাখার দায়ে বাকি মামলাগুলি হয়েছিলো ২০০১ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে।
সবগুলি মামলা থেকেই তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি সমর্থিত ১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর নামে ১৬৭টি মামলা রয়েছে।
৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শেখ আমির হোসেন একটি কনফেকশনারির মালিক। বিনা অনুমতিতে সভা-সমাবেশ করা, সহিংসতা এবং সরকারি কাজে বাধাদান করায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ৪৬টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
একই অপরাধে ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ এর মধ্যে মোট তিনটি মামলা হয়েছিলো ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নুরুল ইসলাম রতনের নামে।
সবগুলো মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ আছে।
Comments