ইরানে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’
জেনারেল কাশেম সুলাইমানি নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ইরানের ভেতরে। এর মধ্যেই ঘটে গেছে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনা। এখন ইরানিরা স্লোগান দিচ্ছেন নিজেদের দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে। ‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’ স্লোগান থেকে এখন শোনা যাচ্ছে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’।
নিহত ১৭৬ জন বিমানযাত্রীর স্মরণে শোকমিছিল খুব দ্রুতই পাল্টে গিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে রূপ পেয়েছে। রোববার তেহরানের আজাদি স্কয়ারে বিক্ষোভ থেকে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পদত্যাগের দাবি উঠেছে। সেই সঙ্গে খোলাখুলিভাবে বিমান ভূপাতিত করার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাইছেন বিক্ষোভকারীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। আরেক ভিডিওতে একজন বলছেন, ‘খামেনির লজ্জা হওয়া উচিত। দেশ ছেড়ে চলে যাও’।
ইউক্রেনের যে বিমানটি ভূপাতিত করা হয়েছে সেখানে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ইরানের নাগরিক ৮২ জন। এর পর রয়েছে কানাডার ৬২ জন। কানাডার নাগরিকদের বেশিরভাগই আবার ইরানি বংশোদ্ভূত। এ কারণেই ইরানিরা নিজেদের ট্রাজেডি হিসেবেই একে দেখছে।
ইরানের ভেতরে যেভাবে নেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে তেমনি চাপ আসছে দেশের বাইরে থেকেও। যুক্ত্ররাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “বিক্ষোভকারীদের যেন হত্যা না করে ইরান।” কানাডা সরকারের দিক থেকেও চাপ বাড়ছে ইরানের ওপর। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতিমধ্যে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা তদন্তে তার দেশকে সম্পৃক্ত করতে ইরানের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জড়িতদের বিচার নিশ্চিত হওয়ার পরই বিরাম নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তাতে সফল হয়নি ইরান। সব মিলিয়ে এখন ভেতর-বাইর দ্বিমুখী চাপে ইরানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
রোববার পার্লামেন্টের উন্মুক্ত অধিবেশনে ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের প্রধান কমান্ডার হোসেন সালামি অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি ভুল করে ফেলেছি। আমাদের ভুলের কারণে সহনাগরিকরা শহিদ হয়েছেন, কিন্তু ঘটনাটি ছিল অনিচ্ছাকৃত। আমার সারা জীবনে আমি এতটা দুঃখ আর কখনো পাইনি। আমি ওই বিমানেই নিজের মৃত্যু কামনা করেছি।
দেশবাসীর কাছে প্রায় একই ভাষায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানিও।
তেহরানের রাস্তা থেকে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে আটকের ঘটনাও ক্ষুব্ধ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। আটকের পর ইরানি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের উস্কানি দেওয়ার সময় রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকয়ারকে আটক করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর ছাড়া পেয়ে রব ম্যাকয়ার টুইটারে বলেন, কাউকে উস্কানি নিতে নয় বরং নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।
এই ঘটনার পর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডমিনিক রাব রাষ্ট্রদূতের আটক হওয়ার ঘটনাকে “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ” হিসেবে মন্তব্য করে নিন্দা জানান। একই ধরনের বিবৃতি দেন জার্মানি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও।
আরও পড়ুন:
সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ: নোয়াম চমস্কি
ইরান প্রশ্নে অধিকাংশ আমেরিকান ট্রাম্পবিরোধী, ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়
Comments