মহাসড়কে টোল আদায়ে জরিপ করবে সওজ

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। স্টার ফাইল ছবি

দেশের চার-লেনের মহাসড়কগুলোতে টোল আদায়ে কী ধরনের অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে তা নিরূপণে জরিপ শুরু করতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

টোল আদায় সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রথম ধাপে ঢাকা-চাট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এই জরিপ চালানো হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব (টোল ও অ্যাক্সেল) মোহাম্মদ শফিকুল করিম গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “এই দুটি মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহন থেকে কীভাবে টোল আদায় করা যায় সে সংক্রান্ত জরিপ চালানোর জন্য সওজের প্রস্তাবকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি।”

অন্য এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সওজ এই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। জরিপ করে মতামত জানানোর জন্য গতকাল সওজকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাসড়কে চলাচল করা দূর-পাল্লার যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

তখন বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মহাসড়ক থেকে আদায় করা টোলের অর্থ ব্যাংকে জমা হবে এবং সেই টাকা মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে ব্যয় হবে।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, তবে স্বল্প-দূরত্বে চলাচল করা যানবাহনগুলোকে কোনও টোল দিতে হবে না। শিগগিরই মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কিত একটি নির্দেশনা প্রস্তুত করবে।

কিন্তু, বেসরকারি বাস অপারেটর এবং সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর মতে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের খরচ বাড়বে। কারণ পরিবহন কোম্পানিগুলো তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে।

টোল আদায় শুরু করার আগে সরকারকে অবশ্যেই সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে- এমন কথা তারা একাধিকবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন।

টোল নীতি-২০১৪ এর আওতায় সওজ বর্তমানে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ হাটিকুমরুল-বনপাড়া, ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ চাট্টগ্রাম বন্দর এক্সেস সড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর থেকে শেরপুর পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার সড়কে টোল আদায় করছে।

২০১৪ সালের এই নীতিমালায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারের ভিত্তি টোল দুই টাকা, জাতীয় মহাসড়কে দেড় টাকা, আঞ্চলিক মহাসড়কে এক টাকা এবং জেলা সড়কগুলোতে ৫০ পয়সা টোল ধার্য করা হয়েছে।

জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা পর্যায় মিলিয়ে মোট ২২ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে সওজের। এরমধ্যে ঢকা-চাট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের। এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চার লেনের নির্মাণ কাজ চলছে।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পারভীন সুলতানা জানান, তারা প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টোল আদায়ের পরিকল্পনা করছেন।

তিনি গতকাল দ্য ডেইল স্টারকে জানান, মহাসড়কের বর্তমান অবস্থায় টোল আদায় সম্ভব নয় এবং টোল আদায়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর মূল্যায়ন প্রয়োজন।

অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ধরনের বড় জরিপ পরিচালনার জন্য আমাদের পরামর্শদাতার প্রয়োজন হতে পারে। আমরা অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করব।”

গত বছরের অক্টোবরে পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, টোল সংগ্রহের জন্য মহাসড়কগুলো এখনও অনুপযোগী।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এখানে দুই-স্তরের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। কারণ, যেখানে টোল সংগ্রহ করা হয় সেই সড়কটি হবে নিয়ন্ত্রিত। আর যারা টোল প্রদান করতে অনাগ্রহী তাদের জন্য বিকল্প রাস্তা থাকতে হবে।

“কিন্তু, আমাদের মহাসড়কগুলো এমন নয়। সুতরাং বিকল্প রাস্তা না করে টোল আরোপ করা যৌক্তিক হবে না।”

শামসুল হক বলেছেন, “মহাসড়কে অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহনের অনুমতি দেওয়া এবং রাস্তার গুণমান নিশ্চিত না করে মানুষের কাছ থেকে টোল আদায় করা হবে ‘অনৈতিক’।”

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রসঙ্গে তিনি জানান, যানবাহন নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ, অন্যান্য চার্জ এবং সেতু থেকে টোল আদায় করে কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা আয় করে।

এই অর্থ একটি ফান্ডে জমা করে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago