‘তিনি মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন’

২০১৮ সালের ২৩ জুন সকালের ঘটনা। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দেখা করতে ব্যাক সেন্টারে গিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
ছবি: স্টার

২০১৮ সালের ২৩ জুন সকালের ঘটনা। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দেখা করতে ব্যাক সেন্টারে গিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

ব্র্যাক সেন্টারের নিচতলায় লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন আনিসুজ্জামান। এমন সময় হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে তার কাঁধে হাত রাখেন। তিনি হলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এরপর তারা দুজন লিফটে করে স্যার আবেদের অফিস কক্ষে যান।

আনিসুজ্জামান বলেন, ‘‘সেখানে বিনা দ্বিধায় তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার মস্তিষ্কে ক্যানসার ধরা পড়েছে। চিকিৎসকরা আমাকে চার মাস সময় দিয়েছে।’ এটি শোনার পর আমি শুধু ‘ওহ নো!’ ছাড়া কিছুই বলতে পারিনি।’’

গতকাল (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মরণানুষ্ঠানে এভাবেই তার সঙ্গে নিজের স্মৃতির কথা বলছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

কথোপকথনের এক পর্যায়ে স্যার ফজলে হাসান আবেদ আর চিকিৎসা নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে।

এ ঘটনার দুদিন পর ব্র্যাকের ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠকে স্যার আবেদ ঘোষণা দেন, তিনি ও আনিসুজ্জামান (শুরুর দিক থেকেই তিনি ব্র্যাকের সঙ্গে ছিলেন) ব্র্যাকের ট্রাস্টি বোর্ডের দায়িত্বে আর থাকবেন না।

সেসময় উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা স্যার আবেদের জীবন এবং উন্নয়ন খাতে তার পাঁচ দশকের যাত্রার কথা স্মরণ করেন। তারা বলেন, স্যার আবেদের উদ্যোগগুলো বাংলাদেশে ও এর বাইরে অতুলনীয় ছিল এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করেছিল।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘‘ফজলে হাসান আবেদের লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়ন। এর জন্য তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান, এ তিনটি আলাদা খাতকে বেছে নিয়েছিলেন।’’

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদের অন্যতম বড় অবদান হলো, বাংলাদেশে গরিব এবং নিঃস্বদের জন্য কিছু করা সম্ভব এবং সরকারের সহায়তা ছাড়াই সেটি সম্ভব, এই ধারণাটির প্রতি মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করাতে পেরেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন সামাজিক সূচকে এখন দেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে এবং অবশ্যই এর পেছনে সরকারেরও অবদান রয়েছে।’’

‘‘তবে বেসরবকারি খাতও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে এবং আসলেই এটি তা করতে সক্ষম, মানুষের মনে এ বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন স্যার আবেদ,’’ বলেছেন মাহফুজ আনাম। এসময় স্যার আবেদকে ‘অবিচলিত স্বপ্নদ্রষ্টা (constant visionary) ও নিরলস বাস্তবায়নকারী (relentless implementer)’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেছেন, ‘‘লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্যার ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী।’’

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ‘‘স্যার আবেদের ব্যক্তিত্বের একটি স্বল্প পরিচিত দিক হলো তিনি শিল্প-সমঝদার ছিলেন। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে অনেক দুর্লভ ও আসল (original) শিল্পকর্ম রয়েছে।’’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক প্রস্তাব করেন, তার প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যাক মিলে স্যার আবেদের নামে স্মৃতিমূলক সিরিজ লেকচারের আয়োজন করতে পারে।

‘‘প্রতি তিন মাসে একবার এই সিরিজ লেকচার অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্কলাররা বিভিন্ন ইস্যুর ওপর বক্তব্য দেবে,’’ বলেন রুবানা হক।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের প্রিভেন্টিং ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক নবনীতা চৌধুরীও বক্তব্য দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago