চীনের ‘রহস্যময় প্রাণঘাতী’ করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা

চীনে গত ডিসেম্বরে খোঁজ পাওয়া গেছে ‘রহস্যময় প্রাণঘাতী’ নতুন এক করোনাভাইরাসের। দেশটির হুবেই প্রদেশের রাজধানী ও মধ্য চীনের সবচেয়ে জনবহুল শহর উহানের একটি সামুদ্রিক মাছের পাইকারি বাজারে প্রথম আক্রান্ত মানুষকে শনাক্ত করা হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন এই ভাইরাস একজনের শরীর থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।
CHINA-HEALTH-PNEUMONIA.jpg
হংকংয়ের একটি হাসপাতালে টানানো স্বাস্থ্য সতর্কতামূলক পোস্টারের পাশ দিয়ে মাস্ক পরে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী। ২১ জানুয়ারি ২০২০। ছবি: রয়টার্স

চীনে গত ডিসেম্বরে খোঁজ পাওয়া গেছে ‘রহস্যময় প্রাণঘাতী’ নতুন এক করোনাভাইরাসের। দেশটির হুবেই প্রদেশের রাজধানী ও মধ্য চীনের সবচেয়ে জনবহুল শহর উহানের একটি সামুদ্রিক মাছের পাইকারি বাজারে প্রথম আক্রান্ত মানুষকে শনাক্ত করা হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন এই ভাইরাস একজনের শরীর থেকে আরেক জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশ্বজুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইতিমধ্যে উহান থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করেছে সিঙ্গাপুর ও হংকং। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতেও একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো যোগাযোগ থাকায় বিশেষ সতর্কতায় রয়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

ভাইরাসটির প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, কোনো প্রাণীই ভাইরাসটির উৎস। এটি নাক, সাইনাস বা গলার উপরিভাগ ও ফুসফুসে বড় ধরণের সংক্রমণ ঘটায়। রেসপিরেটরি লক্ষ্মণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষ্মণ। বেশিরভাগ করোনাভাইরাসই বিপজ্জনক নয়, তবে অপরিচিত এই ভাইরাস ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Wuhan-virus-map-1.jpg
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্কতামূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  করোনাভাইরাস পরিবারে ছয়টি ভাইরাস আগে থেকে পরিচিত থাকলেও, এটি নতুন। চীনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, ইতিমধ্যে অন্তত চারজন এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন আরও অন্তত দুইশ জন।

জেনেটিক কোড বিশ্লেষণে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের মতো। সার্স ভাইরাসের কারণে ২০০০ সালের শুরুতে এশিয়ার অনেক দেশে ৭৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিলো।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক উলহাউস বলেছেন, “আমরা যখন নতুন কোনো করোনাভাইরাস দেখি, তখন আমরা জানতে চাই এর লক্ষ্মণগুলো কতোটা মারাত্মক। এ ভাইরাসটি অনেকটা ফ্লুর মতো, কিন্তু সার্স ভাইরাসের চেয়ে মারাত্মক নয়।”

ইতিমধ্যে নতুন এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ড। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের ‘এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিজ এনালাইসিস’-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীনসহ কয়েকটি দেশে এক হাজার সাতশ মানুষ নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লুনার নিউ ইয়ার বা চান্দ্র নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে যখন লাখ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করেন, সেই সময়ে নতুন এই ভাইরাসে বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে জানিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ।

সিঙ্গাপুরের ডিউক-নুস মেডিকেল স্কুলের ওয়াং লিন ফা সম্প্রতি উহান সফরে করে এসে জানিয়েছেন, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের লক্ষ্মণগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ নজর দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “চাইনিজ নিউ ইয়ার আসছে। চীনে অন্তত ৪০ কোটি মানুষ এ সময় ভ্রমণ করবে বিভিন্ন জায়গায়। প্রত্যেকেই উদ্বিগ্ন। এটার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের।”

সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি পার হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। অরক্ষিত প্রাণী থেকে সাবধানতার পাশাপাশি ডিম ও মাংস রান্না এবং ঠাণ্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ওয়েলকাম ট্রাস্ট এর ড. জোসি গোল্ডিং বলেছেন, “নতুন করে সংক্রমণের খবর না পাওয়া পর্যন্ত এটা বলা কঠিন যে, এ মুহূর্তে আমাদের কতোটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।”

“সার্সের বিষয়টা আমাদের ভালোভাবেই মনে আছে এবং সেজন্যই বেশি ভয় হচ্ছে। কিন্তু এখন এ ধরণের রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমরা অনেক বেশি প্রস্তুত।”

নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জোনাথন বল বলছেন, “আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত এ কারণে যে, যেকোনো ভাইরাসই মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।”

তিনি বলেন, “আর একবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারলে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাসকে সে সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।”

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago