প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগর, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা

পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী উপহার দেওয়ার কথা বললেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্লাস্টিকে মোড়ানো (লেমিনেটেড) নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন গোটা ঢাকা শহর।
posters
সিটি নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীতে দেখা যাচ্ছে প্লাস্টিক মোড়ানো পোস্টার। ছবি: এসকে এনামুল হক

পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী উপহার দেওয়ার কথা বললেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্লাস্টিকে মোড়ানো (লেমিনেটেড) নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন গোটা ঢাকা শহর।

প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বৃষ্টি, কুয়াশা, আর্দ্রতা কিংবা ধুলাবালি থেকে পোস্টারগুলো রক্ষা করার জন্য তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার করছেন।

ঢাকার নয়টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ পোস্টারই প্লাস্টিকে মোড়ানো।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, আশেপাশের অন্তত ২০টি ওয়ার্ডেও একই অবস্থা।

পরিবেশবিদরা বলছেন, পোস্টার প্লাস্টিকে মোড়ানোর (লেমিনেটেড) কারণে পরিবেশের জন্য মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে। একদিকে এই প্লাস্টিক নষ্ট হবে না। অন্যদিকে, একে পুনরায় ব্যবহার করারও সুযোগ নেই।

তারা আরও বলেছেন, বছরের পর বছর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পড়ে থেকে পরিবেশের ক্ষতি করা ছাড়া এগুলোর আর কোনও কাজ নেই। বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক নর্দমায় গিয়ে জমা হয়ে বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণ হবে।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হোসেন বলেছেন, এই প্লাস্টিক তৈরিতে যেসব রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার হয়, সেগুলো বিষাক্ত এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

“পোস্টার মোড়ানোর জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক পলিথিনের চেয়ে খানিকটা মোটা হয়। কিছু বিশেষ রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পলিথিনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে এই প্লাস্টিক তৈরি করা হয়। এগুলো আবার সূর্যের আলো থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন করে,” যোগ করেন তিনি।

শুধু পরিবেশবিদেরাই নন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

Poster print
রাজধানীর আরামবাগ এলাকায় এক ছাপাখানায় পোস্টার লিমিনেটিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। ছবি: আনিসুর রহমান

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, “ঢাকার প্রতিদিনকার বর্জ্য অপসারণ করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এগুলো (লেমিনেটেড পোস্টার) অপসারণ করতে আমরা আরও বিপদে পড়বো।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক জানিয়েছেন, রাস্তার টোকাইরা এসব পোস্টার এবং প্লাস্টিক সংগ্রহ করে এখানে-সেখানে ফেলে রাখে। এক সময় শহরের যত্রতত্র এই প্লাস্টিক ছড়িয়ে যায়।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পোস্টারের পাশাপাশি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সর্বমোট ৭৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ১৪০ মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে তারা প্রায় ৫০ লাখ পোস্টার ছাপাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঐ পোস্টারের অর্ধেকই মেয়র প্রার্থীদের।

উল্লেখ্য, ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমন প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার দেখা গিয়েছিলো।

এই নির্বাচনী প্রচারণার মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই হাইকোর্ট থেকে ‘সিঙ্গেল-ইউজ’ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) সহ ১১টি মানবাধিকার সংস্থার যৌথভাবে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন।

প্লাস্টিকের বিপদজনক প্রভাব- বিশেষত ‘সিঙ্গেল-ইউজ’ প্লাস্টিক, জীববৈচিত্র্য, জলজ ও সামুদ্রিক জীবন, মাটির উর্বরতা, কৃষি উৎপাদন, মানবস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা বিবেচনা করে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর মানবাধিকার সংগঠনগুলো জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলো।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদপ্রার্থী। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।

“নির্বাচনের পরে আমি নিজ খরচে সমস্ত পোস্টার সরিয়ে ফেলবো,” যোগ করেন তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, পোস্টারে প্লাস্টিকের ব্যবহার সবার জন্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। বলেছেন, “যেহেতু ইসির অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই আমরা তাদের অনুমতি ছাড়া কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছি না।”

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

চিঠিতে কী বলা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, “আমরা ইসির কাছ থেকে আইনি সহযোগিতা চাইবো। পাশাপাশি, আমরা তাদেরকে অনুরোধ করবো তারা যেনো প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারগুলো সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রার্থীদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়।”

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার করতে কখনোই কাউকে উৎসাহ দেননি।

পোস্টারের (লেমিনেটেড) বিষয়ে তার মন্তব্য, ইসির নিয়মে কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর তার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। ইসি তাতে হস্তক্ষেপ করবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago