‘এমপিও ভুক্তির খরচ’ ৮ লাখ টাকা দিতে না পারা এক শিক্ষকের কান্না

শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন মনোয়ারুল ইসলাম। এপিও ভুক্তির খরচের অজুহাতে কুমড়িহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার সঙ্গে শুরু হয় বৈষম্যমূলক আচরণ।
Lalmonirhat teacher crying
মনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: স্টার

শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন মনোয়ারুল ইসলাম। এপিও ভুক্তির খরচের অজুহাতে কুমড়িহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার সঙ্গে শুরু হয় বৈষম্যমূলক আচরণ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে পড়াশুনা শেষে ২০১৬ সালে গণিতের শিক্ষক হিসেবে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমড়িহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন মনোয়ারুল ইসলাম। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের দুলালী গ্রামের প্রান্তিক চাষি মঈনুল ইসলামের ছেলে।

শুরুতে বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করাতে থাকেন মেধাবী এই শিক্ষক। গত বছর সেপ্টেম্বরে এমপিও (মান্থলী পেমেন্ট অর্ডার) ভুক্ত হয়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতনও পেয়েছেন।

সব ঠিকঠাক মতো চলতে থাকলেও এমপিও ভুক্তির খরচের অজুহাতে মনোয়ারুলের কাছে ৮ লাখ টাকা দাবী করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। দরিদ্র পরিবারের ছেলে মনোয়ারুলের পক্ষে যা দেয়া কোনো ভাবেই সম্ভব না। তিনি এই ঘুষের টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে এই সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে বৈষম্য আচরণ শুরু করেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে দেওয়া হয়নি নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন। নিষেধ করা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে গেলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ক্লাসে।

মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমি একজন প্রান্তিক চাষির সন্তান। বাড়ি-ভিটা আর সামান্য কিছু আবাদি জমি ছাড়া কোন সম্পদই নেই আমাদের। আমার পক্ষে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দাবীকৃত ৮ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব না।”

তিনি আরও বলেন, “ঘুষের টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান আমার সঙ্গে অমানবিক ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। আমাকে বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে গেলে ক্লাসেও ঢুকতে দিচ্ছেন না, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দিচ্ছেন না। এমনকি সকলের সামনে আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন তিনি।”

কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মনোয়ারুল ইসলাম। মনোয়ারুল ইসলাম জানান, এ বিষয়টি তিনি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান কামরুল ইসলাম প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক এমনকি পরিচালনা পর্ষদের উপরও প্রভাব বিস্তার করেন। তাই কেওই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।

তিনি বলেছেন, “আমি শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের পড়াতে চাই। আমি ঘুষ দিয়ে শিক্ষকতা করতে চাই না। আমি এখন কাঁদছি কিন্তু যতই অশ্রু ঝরুক আমি এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবো।”

কুমড়িহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কোন তথ্য ও বক্তব্য দিতে বাধ্য নন। কোনো তদন্ত কমিটি আসলে তাদের কাছে তিনি বিস্তারিত জানাবেন।

বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্যসহ অভিভাবকরা জানিয়েছেন, মনোয়ারুল ইসলাম একজন মেধাবী শিক্ষক। তিনি শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে পাঠদান করান। তার মতো মেধাবী ও আদর্শ শিক্ষকের খুব প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে তার কি হয়েছে তা তাদের জানা নেই।

আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফ মাহফুজ জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দায়ের করা অভিযোগটি তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। খুব দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago