শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ

৮,২৩৮ ঋণখেলাপির কাছে আটকে রয়েছে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা
জাতীয় সংসদের অধিবেশনের ফাইল ছবি

২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৩৮-এ। এসব খেলাপিরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

গতকাল (২২ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এসব খেলাপিরা ২৫ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

ঋণখেলাপিদের তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষায় তাদের অর্থ কেলেঙ্কারির খবর বেরিয়ে এসেছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই প্রতিষ্ঠানগুলোই দায়ী।

ঋণখেলাপিতে শীর্ষে থাকা তিন প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছে, রিমেক্স ফুটওয়্যার লি., ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লি. ও রুপালি কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লি.।

এই তিন প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তার বেশিরভাগই জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া। যার কোনো অংশই তারা পরিশোধ করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রিসেন্ট গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকিং নীতির কিছুটা ব্যত্যয় ঘটিয়েই সরকারি এই ব্যাংকটি ক্রিসেন্ট গ্রুপকে ঋণ দিয়েছিল।

ঋণখেলাপিদের তালিকায় আরও রয়েছে, আনন টেক্স, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডাইং, সিমরান কম্পোজিট ও আনন টেক্স নিট টেক্স।

এ প্রতিষ্ঠানগুলো ২০০৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেনি।

ঋণখেলাপিদের তালিকায় এছাড়াও রয়েছে, বিল্ড ট্রেড গ্রুপের বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিসমিল্লাহ টাওয়েল ও হলমার্ক গ্রুপের হলমার্ক ডিজাইন ওয়্যার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে বিল্ডট্রেড গ্রুপ তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ঋণ নিয়েছিল।

এছাড়া, তিনটি নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনও (এনবিএফআই ) ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি, ইন্টারন্যাশন্যাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিসেস।

আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্স সার্ভিসেস নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগেও বেশ কয়েকটি নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ঋণ রয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের পরের দুই মাসে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ৩০২ কোটি টাকা কমেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার অর্থঋণ পরিশোধ করার নিয়মে কিছু শিথিলতা আনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে।

ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ

গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিজস্ব এবং অন্যান্য ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তার মতে, এই পরিমাণটি মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।

২৫টি ব্যাংকের পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। যা মোট বকেয়া ঋণের প্রায় দশমিক ১৬৬ শতাংশ।

এছাড়া, ব্যাংক পরিচালকরা অন্য ৫৫টি ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago