প্রভাবশালীদের প্রভাবে তলিয়ে গেছে ৫ শতাধিক কৃষকের জমি
দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে কালভার্ট বন্ধ করে পুকুর কেটে মাছ চাষ করায় পানিতে তলিয়ে আছে দুই হাজার বিঘা কৃষি জমি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের এমন কর্মকাণ্ডে নিজের জমিতে কৃষিকাজ করতে পারছেন না পাঁচ শতাধিক কৃষক। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার ছয় নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের বাড়াইপাড়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌষের এই শুষ্ক মৌসুমেও পানিতে ডুবে আছে কৃষিজমি। শুধু বাড়াইপাড়া গ্রাম নয়, পাশের খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার বিঘা ফসলি জমি ডুবে আছে পানিতে।
ব্যক্তিগত ও খাসজমি বরাদ্দ নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে প্রায় নয়টি পুকুরের পাড় তৈরি এবং রাস্তার ওপর সচল ছয়টি কালভার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেসব জমির মালিক আম্রবাড়ি, পূর্ব মহেষপুর, মহাদিপুর, বারাইপাড়া, লালপুর, নারায়ণপুরসহ প্রায় ১০টি গ্রামের কৃষক।
ফুলবাড়ি উপজেলার মহাদিপুর গ্রামের কৃষক শাহদুল হক জানান, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় তার আট বিঘা আবাদি জমি পানিতে ডুবে আছে। দুই বছর ধরে সেসব জমিতে আবাদ করছে পারছেন না তিনি।
একই গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী জানান, কৃত্রিম জলাবদ্ধতার ফলে গত দুই বছরে তার ১০ বিঘা জমিতে কোনো ফসলই আবাদ করতে পারেননি তিনি।
প্রতিবছর তার পাঁচ বিঘা জমিতে ১৮০ মন ধান পেতেন বলে জানান সজিবুল ইসলাম। কিন্তু, গত দুই বছর ধরে আবাদ করতে না পারায় এক কেজি ধানও ঘরে তুলতে পারেননি তিনি। এই অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম সংকটে রয়েছেন তিনি।
খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোজাফফর হোসেন চৌধুরী জানান, এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পানি প্রবাহের পথে নয়টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। পুকুরের পাড় উঁচু থাকায় আটকে গেছে কালভার্ট। সে কারণে পথ বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবাহের পথ।
এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে বার বার যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান তিনি।
প্রভাবশালীদের একজন গড়পিংলাই গ্রামের সামস সুমন মিশুকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান যে, অন্যরা পুকুরের পাড় ভেঙ্গে দিলে তিনিও দেবেন।
তিনি জানান, পানিতে আবাদি জমি ডুবে থাকার কারণে তাদেরও ফসল হচ্ছিলো না। এই কারণেই এখন পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন তারা। পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, বারাইপাড়া গ্রামের কৃষক হারুন-উর রশিদ জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি খাল খনন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু, সেটির কার্যকারিতা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ওই খাল দিয়ে বর্ষার সময় গ্রামে পানি ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। পুকুরের পাড় ভেঙ্গে দিয়ে ও কালভার্টগুলোর মুখ খুলে দিয়ে আগের মতো পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার দাবি তার।
তিনি জানান, স্থায়ী সমাধানের আশায় একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কোনো সুফল আসেনি।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত এই সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে।
সমস্যাটি সমাধানের জন্য ফুলবাড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
Comments