ভ্যালেন্সিয়ার কাছে পাত্তাই পেল না বার্সেলোনা

কোচ বদলেছে। তবে বদলায়নি বার্সেলোনার অ্যাওয়ে ম্যাচের দুর্বলতা। এদিন লালিগার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি কাতালানরা। নিতান্ত ভাগ্য সঙ্গে থাকায় মাত্র ২-০ গোলে হেরেছে দলটি। অন্যথায় ব্যবধান আরও বড় হতে পারতো। দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে জোড়া গোল করে ভ্যালেন্সিয়াকে দারুণ এ জয় এনে দেন উরুগুইয়ান তারকা ম্যাক্সি গোমেজ।
অথচ ম্যাচের শুরুতে খলনায়ক ছিলেন গোমেজ। একাদশ মিনিটে গোল পেনাল্টি মিস করেন তিনি। এরপর ম্যাচের ৪৮ ও ৭৭তম মিনিটে দুটি গোল করে নায়ক সেই গোমেজই। এছাড়া তার আরও একটি শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে।
অন্যদিকে নিজের তৃতীয় ম্যাচেই বাস্তবতা টের পেলেন বার্সেলোনার নতুন কোচ কিকে সেতিয়েন। বার্সেলোনার অ্যাওয়ে ম্যাচের দুর্বলতা কাটাতে ব্যর্থ হন তিনিও। এর আগে সাবেক কোচ এরনেস্তো ভালভার্দের মূল দুর্বলতাই ছিল এটা। যে কারণে মৌসুমের মাঝে ছাঁটাই হতে হয় তাকে।
তবে এদিন ম্যাচের ৭৪ শতাংশ বল পায়ে রেখেছিল বার্সা। কিন্তু তারপরও ম্যাচের প্রথমার্ধে গোল করার মতো একটাও আক্রমণ করতে পারেনি দলটি। দ্বিতীয়ার্ধে চাপ বাড়ালেও অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খেই খেয়েছে তারা। অন্য দিকে কাউন্টার অ্যাটাকে দারুণ সব আক্রমণ করে গোল আদায় করে নেয় ভ্যালেন্সিয়া। পেতে পারতো আরও একটি গোল। তবে অজানা কারণে তা বাতিল করে দেন রেফারি।
এদিন ম্যাচের একাদশ মিনিটে বার্সেলোনার ত্রাতা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রেস টের স্টেগেন। ডি-বক্সের মধ্যে হোসে গায়াকে ফাউল করেছিলেন জেরার্দ পিকে। ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে স্পট কিক থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেননি ম্যাক্সি গোমেজ। বাঁ দিকে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন স্টেগেন। ১৯তম মিনিটে নিজেদের বলেই প্রায় বল ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন পিকে। কার্লোস সোলেরের ক্রস হেড দিয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলেন সের্জি রোবার্তো। কিন্তু তার হেড পিকের গায়ে লেগে জালে দিকে যাচ্ছিল। গোলমুখে গোলরক্ষক বরাবর থাকায় তা ধরে ফেলেন স্টেগেন।
২৯তম তো অবিশ্বাস্য স্টেগেন। গোমেজের জোরালো শট ফিস্ট করে ঠেকিয়ে দেন স্টেগেন। তবে তার হাতে লাগার পর বারপোস্টে লেগে তা ফিরে আসে। ফিরতে বলে কেভিন গোমেরিওকে হেড দিয়ে পাস থেকে সোলের। লক্ষ্যে শট নিয়েছিলেন গোমেরিও। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঠেকিয়ে দেন স্টেগেন। পরের মিনিটে ফাঁকায় ভালো ক্রস দিয়েছিলেন সোলের। দরকার ছিল একটি টোকার। কিন্তু অল্পের জন্য মাথা লাগাতে ব্যর্থ হন টোরেস ফেরান। এর পরের মিনিটে আবারো বার্সার ত্রাতা স্টেগেন। ফ্রান্সিস কোকেলিনের গড়ানো জোরালো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন এ জার্মান গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারতো বার্সেলোনা। মেসির সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে লক্ষ্য দারুণ এক শট নিয়েছিলেন আনসু ফাতি। কিন্তু অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট। উল্লেখ্য, ম্যাচে এটাই বলার মতো প্রথম আক্রমণ বার্সেলোনার। তবে পরের মিনিটেই গোল খেয়ে বসে বার্সা। গোমেরিওর ক্রস ধরে জোরালো এক শট নেন গোমেজ। তবে আলবার গায়ে লেগে দিক বদলে জালে জড়ালে পিছিয়ে পড়ে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।
৫৮তম মিনিটে দারুণ সুযোগ মিস করেন মেসি। আলবার আড়াআড়ি বাড়ানো বলে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। তবে মুহূর্তেই দারুণ এক ট্যাকলে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন ভ্যালেন্সিয়ার এক ডিফেন্ডার। পরের মিনিটে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু অল্পের জন্য বারপোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে আবারও হতাশ হতে হয় সফরকারীদের।
৬৮তম মিনিটে আলবার সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে হাওয়ায় ভাসিয়ে আরও একটি দারুণ শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু এবারও অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর আলবার আরও একটি ক্রসে ভালো হেড নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেন নি।
৭৩তম মিনিটে ফ্রিকিক থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন মেসি। তবে তার চেয়েও দারুণ দক্ষতায় তা ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক। চার মিনিট পর উল্টো ব্যবধান বাড়ায় ভ্যালেন্সিয়া। টোরেসের কাছ থেকে একবারে ফাঁকায় বল পেয়ে দেখে শুনে সময় নিয়ে দারুণ এক কোণাকোণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন গোমেজ।
৮১তম মিনিটে আরও একটি গোল খেয়েছিল বার্সেলোনা। কর্নার থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে দারুণ শট নিয়েছিলেন পাউলিস্তা। গোলরক্ষক টের স্টেগেন তা ফেরালে বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে তার গায়ে লেগে জালে জড়ায়। তবে সে গোল বাতিল করে ফের কর্নার নেওয়ার নির্দেশ দেন রেফারি।
৮৫তম মিনিটে মেসির দুর্বল শট ধরে ফেলেন গোলরক্ষক জেস্পার সিলেসেন। ম্যাচের যোগ করা সময়ে বদলী খেলোয়াড় আর্তুরু ভিদালের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে ভালো শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু আবারও মেসিকে হতাশ করেন সিলেসেন। ফিরিয়ে দেন সে শট। এরপরও ব্যবধান কমানোর কিছু সুযোগ পেয়েছিল কাতালানরা। কিন্তু তা থেকে গোল আদায় করতে না পারলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
Comments