ফিরে আসবে সিলেটের কমলা ও লেবুর অতীত গৌরব

গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা গ্রামের কমলা চাষি সাধন চন্দ্র দেব তার বাগান থেকে কমলা সংগ্রহ করছেন। ছবি: স্টার

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট ও মৌলভীবাজারের পাহাড়ি জনপদের কমলা ও বিভিন্ন প্রজাতির লেবুর খ্যাতি দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় বিভিন্ন জাতের কমলা ছাড়াও সিলেটের জারা লেবু, সাতকরাসহ অন্যান্য লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছিলো সিলেটের এসব লেবু জাতীয় ফল। কিন্তু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কমলা, সাতকরাসহ লেবু জাতীয় ফলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে। যা কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে।

‘লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর আওতায় সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৯টি উপজেলায় কমলা, মাল্টা ও বিভিন্ন জাতের লেবুর উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

২০১৯ সালে শুরু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদী এ প্রকল্প চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।

এর আগে, ২০০১ সালে সিলেটের কৃষকদের কমলা চাষে উদ্ধুব্ধ করতে শুরু হয় ‘বৃহত্তর সিলেট সমন্বিত কমলা চাষ উন্নয়ন’ নামের আট বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প। এর আওতায় সিলেটের চারটি জেলায় প্রায় ২৫০টি বাগান এবং পাঁচ হাজার কমলা চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের জুনে শেষ হয় এ প্রকল্প।

২০০১ সালে সিলেট বিভাগে যেখানে ২৮২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হতো, সেখানে ওই প্রকল্পের শেষে কমলা চাষ বেড়ে দাঁড়ায় ৫১০ হেক্টর জমিতে।

এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অনেক কৃষক নতুন করে কমলাসহ লেবু জাতীয় ফসলের চাষ শুরু করলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতার অভাবে তা বিস্তৃত হয়নি।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা গ্রামের কমলা চাষি সাধন চন্দ্র দেব। তার কমলা বাগানে ১০০ এর অধিক গাছ রয়েছে।

কমলা চাষ নিয়ে সাধন চন্দ্র দেব জানান, সিলেটের মাটি কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। স্থানীয় জাতের কমলা অনেক রসালো ও সুমিষ্ট হয়। আর ফলনও ভালো হয়। এ বছর প্রায় ৬০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করার কথা জানান তিনি।

সাধন চন্দ্র দেব বলেন, “বাগান বড় করার জন্য আমার পর্যাপ্ত জায়গা থাকার পরও সরকারি সহযোগিতার অভাবে তা করতে পারছি না। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের আমার বাগান পরিদর্শনে আসতে বলেছিলাম, তারা দেখতেও আসেননি।”

এবার নতুন এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতার মাধ্যমে সিলেটের কমলা ও অন্যান্য লেবু চাষের সুদিন ফিরবে বলে ধারণা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথ এবং মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের দুটি এবং মৌলভীবাজারের দুটি উপজেলার প্রতিটিতে ৩০ জন করে মোট ১২০ জন কৃষককে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব কৃষকরা প্রশিক্ষণের আওতায় ১২০টি কমলার বাগান করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মজুমদার মো. ইলিয়াস বলেন, সিলেটের পাহাড়ি কিছু অঞ্চলের আবহাওয়া লেবুজাতীয় ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আর এ অঞ্চলের কমলা ও কিছু লেবু সারাদেশে বিখ্যাত। তাই কমলা ও অন্যান্য লেবুজাতীয় ফসলের চাষে কৃষকদের নতুন করে উদ্বুদ্ধ করতে ও সহযোগিতা করতে এ প্রকল্প কাজ করবে।

মজুমদার মো. ইলিয়াস বলেন, “নতুন চাষিদের কমলা ও অন্যান্য লেবুজাতীয় ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি পুরাতন চাষিদেরও সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। প্রকল্প না থাকায় মাঝখানে অনেক পুরাতন চাষিকে সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি, এবার তা সম্ভব হবে।”

Comments

The Daily Star  | English

Torch procession at DU demanding justice for JCD leader Shammo

The procession, under the banner of "Students Against Terrorism", began around 8:20pm

29m ago