দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে যুব বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশ

Tanjid Tamim
৮০ রানের ইনিংসের পথে ওপেনার তানদিজ তামিম, ছবি: আইসিসি

ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসান তামিম এবং মিডল অর্ডারে তৌহিদ হৃদয়-শাহাদাত হোসেনের ব্যাটে মিলেছিল চ্যালেঞ্জিং পুঁজি। সেই পুঁজি পেয়ে বোলাররা উঠলেন জ্বলে। দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব আর শরিফুল ইসলাম দেখালেন ঝাঁজ। স্পিনার শামীম পাটোয়ারী আর হাসান মুরাদ করলেন আঁটসাঁট বোলিং। তবে সব আলো কেড়ে নিয়ে নায়ক হয়ে উঠলেন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান। তার স্পিনে যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখল প্রোটিয়ারা! বিশাল জয় পাইয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে শেষ চারে নিয়ে যাওয়ার মূল কৃতিত্ব তার।

পচেফস্ট্রুমে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ যুব দল। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশের ৫ উইকেটে ২৬১ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়েছে মাত্র ১৫৭ রানে। ৯.৩ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে রকিবুল নেন ৫ উইকেট। ২০১৬ সালের পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ছোটদের বিশ্ব আসরের শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আকবর আলিদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।

লক্ষ্য তাড়া করতে নামা প্রোটিয়া যুবাদের শুরু থেকেই চেপে ধরে বাংলাদেশ। শরিফুলের পেসে, শামীমের স্পিনে রান উঠাতে পারছিল না তারা। শুরুতে মিলতে পারত উইকেটও। শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন জোনাথন বার্ড, অধিনায়ক আকবর তা হাতে জমাতে পারেননি। ১২ রানে জীবন পাওয়া সেই বার্ড পরে ফেরেন ৩৫ রান করে। তার আগেই অবশ্য কানিয়া কোটানিকে ফিরিয়ে দেন সাকিব।

আক্রমণে এসে রান আটকে দেওয়ার পাশাপাশি সাফল্য পান বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল। ওপেনার বার্ড আর  টুর্নামেন্টের এখন পর্যন্ত সর্বাধিক রান করা প্রোটিয়া অধিনায়ক ব্রাইস পারসনসকে পর পর ফিরিয়ে দেন তিনি। খানিক পর পেসার সাকিব পরের স্পেলে ফিরে টাইরিস কারেলসকে প্লেইড অনে বোল্ড করলে কোমর ভেঙে যায় প্রোটিয়াদের।

পঞ্চম উইকেটে ৩৬ রানের ছোট জুটির পর বাংলাদেশ ফের ব্রেক থ্রু পায় সাকিবের হাত ধরে। উইকেটটি অবশ্য পেয়েছেন শরিফুল। জ্যাক লিস এই বাঁহাতি পেসারের বল পুল করতে গিয়ে আকাশে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। স্কয়ার লেগে অনেকখানি দৌঁড়ে ঝাঁপিয়ে চোখ ধাঁধানো ক্যাচ লুফে নেন সাকিব।

প্রথম স্পেলে জোড়া উইকেট নেওয়া রকিবুল পরের স্পেলে ফিরেই পেকো মোলেটসেনকে স্টাম্পিং করে দেন, টিয়ান ভ্যান ভুরেন হন এলবিডব্লিও। দক্ষিণ আফ্রিকানদের হয়ে একমাত্র ফিফটি করে লুক বেউফোর্ট লম্বা করছিলেন খেলা। ৯১ বলে ৬০ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে পঞ্চম শিকার দখল করেন রকিবুল। এর দুই বল পর মন্ডি খুমালো রানআউট হলে শেষ হয় স্বাগতিকদের ইনিংস।

এর আগে পচেফস্ট্রুমে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। তাতে অবশ্য মন্দ হয়নি। দলকে জুতসই শুরু এনে দেন দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তামিম। সাবধানী শুরুতে ১২ ওভার টিকে যান তারা। ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটির পর কিছুটা মন্থর খেলা ইমন ফেরেন ৪০ বলে ১৭ করে। তিনে নেমে মাহমুদুল হাসান জয় ফেরেন দ্রুত। আরেক ওপেনার তামিম ছিলেন তেতে। তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি রানের চাকাও সচল রাখেন তিনি।

তৃতীয় উইকেটে দুজনে আনেন আরও ৫৭ রান। ৮৪ বলে ৮০ করে তানজিদের আউটে ভাঙে জুটি। থিতু হতে সময় নেওয়া হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে রানের গতি বাড়ে শাহাদাতের ব্যাটে। পাঁচে নামা এই ব্যাটসম্যানই মূলত দলের পুঁজি বড় করতে রাখেন বড় ভূমিকা। দারুণ সব সাহসী শট, পরিস্থিতির বিচার করে বুদ্ধিদীপ্ত খেলা উপহার পাওয়া গেছে তার ব্যাট থেকে।

শাহাদাতের সঙ্গে ১০২ রানের জুটি গড়ে ৭৩ বলে ৫১ করে ফেরেন হৃদয়। শাহাদাতকে আর টলানো যায়নি। স্লগ ওভারে নেমে শামীম দ্রুত ফিরলে দলনেতা আকবরকে নিয়ে দ্রুত রান বাড়ান তিনি। তার ৭৬ বলে ৭৪ আর আকবরের ১১ বলে ১৬ রানে আড়াইশো ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। স্পিনারদের জন্য আদর্শ উইকেটে সেই রান পরে হয়েছে বেশ ভালো সংগ্রহ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬১/৫ (পারভেজ ১৭, তামিম ৮০, মাহমুদুল ৩, তৌহিদ ৫১, শাহাদাত ৭৪*, শামীম ১, আকবর ১৬*; কোয়েটজি ০/৩৭, ক্লোয়েট ০/৫৩, ভুরেন ১/৪৬, মোলেটসেন ২/৪১, পারসনস ০/৫৪, খুমালো ০/২২)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪২.৩ ওভারে ১৫৭ (বার্ড ৩৫, কোটানি ১৫, পারসনস ৭, বেউফোর্ট ৬০, কারেলস ৪, লিস ১৯, মোলেটসেন ১, ভুরেন ৯, কোয়েটজি ২, ক্লোয়েট ২*, খুমালো ০; শরিফুল ১/২৮ , শামীম ১/৩৬ , সাকিব ২/৪১, রকিবুল ৫/১৯ , মুরাদ ০/২৬, হৃদয় ০/৭ )।

ফল: বাংলাদেশ ১০৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রকিবুল হাসান।

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat calls for mass rally after Juma prayers demanding AL ban

The announcement came during an ongoing protest programme that began last night in front of Jamuna.

2h ago